ইবরাহিম আ.-এর কাছে ফেরেশতারা যে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন
হজরত ইবরাহিম আ.-কে মুসলিম জাতির পিতা বলা হয়। তাঁর পুরো জীবন ছিল ঘটনাবহুল ও চমদপ্রদ। তাঁকে আল্লাহ তায়ালা অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন করেছিলেন, তিনি সব পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে খলিলুল্লাহ উপাধী লাভ করেছিলেন।
ইবরাহিম আ.দীর্ঘ দিন নিঃসন্তান ছিলেন। বৃদ্ধ বয়সে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে সন্তান দান করেছিলেন। সন্তান লাভের সুসংবাদ দেওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে কয়েকজন ফেরেশতা পাঠিয়েছেন।
হজরত ইবরাহিম আ.-এর স্ত্রী ‘সারা’ নিঃসন্তান ছিলেন। তিনি সন্তানের জন্য উদগ্রীব ছিলেন। কিন্তু স্বামী-স্ত্রী উভয়েই বার্ধক্যের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিলেন।
তাই দৃশ্যত তাঁদের সন্তান লাভের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। এ অবস্থায় আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের মাধ্যমে তাঁদের সুসংবাদ দান করেন যে অচিরেই তাঁরা একজন পুত্রসন্তান লাভ করবেন। তাঁর নাম হবে ইসহাক। তাঁদের আরও জানানো হয় যে ইসহাক আ. দীর্ঘজীবী হবেন। তিনিও সন্তান লাভ করবেন।
তাঁর সন্তানের নাম হবে ইয়াকুব আ.। তাঁরা উভয়েই নবুয়তের মর্যাদায় অভিষিক্ত হবেন।
সুসংবাদ নিয়ে আসা ফেরেশতারা মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন। তাই হজরত ইবরাহিম তাঁদের মেহমান মনে করেছিলেন। তিনি তাঁদের জন্য সদ্য জবাই করা বাছুর গরুর গোশত ভুনা করে নিয়ে আসেন।
কিন্তু তারা ছিলেন ফেরেশতা, তারা পানাহারের উর্ধ্বে। কাজেই সামনে খাবার দেখেও তারা সেদিকে হাত বাড়ালেন না। ইবরাহিম আলাইহিস সালাম বিষয়টি খেয়াল করে আতঙ্কিত হলেন যে, হয়ত এদের মনে কোন দুরভিসন্ধি রয়েছে।
ফেরেশতারা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের অমূলক আশঙ্কা আন্দাজ করে তা দূর করার জন্য স্পষ্টভাবে জানালেন যে—আপনি শঙ্কিত হবেন না, আমরা আল্লাহর ফেরেশতা। আপনাকে একটি সুসংবাদ দান করে ও অন্য একটি বিশেষ কাজ সম্পাদনের জন্য আমরা প্রেরিত হয়েছি। তা হচ্ছে লুত আলাইহিস সালামের কাওমের উপর আজাব নাজিল করা।
ইবরাহিম আলাইহিস সালামের স্ত্রী সারা পদার আড়ালে দাঁড়িয়ে কথাবার্তা শুনছিলেন। বৃদ্ধকালে সন্তান লাভের সুখবর শুনে হেসে ফেললেন এবং বললেন, এই বৃদ্ধ বয়সে আমার গর্ভে সন্তান জন্ম হবে। আর আমার স্বামীও তো অতি বৃদ্ধ।
ফেরেশতাগণ উত্তর দিলেন, তুমি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি বিস্ময় প্রকাশ করছ? তার অসাধ্য কিছুই নেই। তোমাদের পরিবারের উপর আল্লাহ তায়ালার প্রভূত রহমত এবং অফুরন্ত বরকত রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
وَلَقَدۡ جَآءَتۡ رُسُلُنَاۤ اِبۡرٰہِیۡمَ بِالۡبُشۡرٰی قَالُوۡا سَلٰمًا ؕ قَالَ سَلٰمٌ فَمَا لَبِثَ اَنۡ جَآءَ بِعِجۡلٍ حَنِیۡذٍ ٦٩ فَلَمَّا رَاٰۤ اَیۡدِیَہُمۡ لَا تَصِلُ اِلَیۡہِ نَکِرَہُمۡ وَاَوۡجَسَ مِنۡہُمۡ خِیۡفَۃً ؕ قَالُوۡا لَا تَخَفۡ اِنَّاۤ اُرۡسِلۡنَاۤ اِلٰی قَوۡمِ لُوۡطٍ ؕ ٧۰ وَامۡرَاَتُہٗ قَآئِمَۃٌ فَضَحِکَتۡ فَبَشَّرۡنٰہَا بِاِسۡحٰقَ ۙ وَمِنۡ وَّرَآءِ اِسۡحٰقَ یَعۡقُوۡبَ ٧١ قَالَتۡ یٰوَیۡلَتٰۤیءَ اَلِدُ وَاَنَا عَجُوۡزٌ وَّہٰذَا بَعۡلِیۡ شَیۡخًا ؕ اِنَّ ہٰذَا لَشَیۡءٌ عَجِیۡبٌ ٧٢ قَالُوۡۤا اَتَعۡجَبِیۡنَ مِنۡ اَمۡرِ اللّٰہِ رَحۡمَتُ اللّٰہِ وَبَرَکٰتُہٗ عَلَیۡکُمۡ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ ؕ اِنَّہٗ حَمِیۡدٌ مَّجِیۡدٌ ٧٣
আমার প্রেরিত ফেরেশতাগণ ইবরাহিমের কাছে সুসংবাদ নিয়ে এসেছিল। তারা এসে বলল, তোমার প্রতি সালাম! সেও বলল, ‘তোমাদের প্রতিও সালাম!’ অনতিবিলম্বে সে (ইবরাহিম আ.) ভুনা করা বাছুর নিয়ে এলো।
কিন্তু যখন সে দেখল যে, তাদের হাত সেই খাবারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে না তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ভয় করবেন না, আমরা লূত সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।
(ইবরাহিমের) স্ত্রী দাঁড়িয়েছিল, সে হেসে উঠলো। তখন আমি তাকে (ইবরাহিমের স্ত্রীকে) সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের এবং ইসহাকের পর ইয়াকূবের।
সে বলল, ‘হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার’!
তারা (ফেরেশতারা) বলল, ‘আল্লাহর সিদ্ধান্তে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত’।
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট