আয়-রোজগারে বরকত লাভের আমল ও দোয়া
আল্লাহ তায়ালা নিজের বান্দার কিছু অংশকে দিয়েছেন ধন-সম্পদ ও অর্থ প্রাচুর্য। আবার কিছুকে করেছেন নিম্নবিত্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যদি আল্লাহ তার বান্দাদের রিজিক প্রশস্ত করে দিতেন, তবে তারা জমিনে অবশ্যই সীমালঙ্ঘন করত; কিন্তু তিনি তার ইচ্ছেমত পরিমাণেই নাজিল করে থাকেন। নিশ্চয় তিনি তার বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত ও সর্বদ্ৰষ্টা।’ -(সুরা শূরা, আয়াত, ২৭)
অর্থাৎ, যদি মহান আল্লাহ প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমানভাবে প্রয়োজনেরও বেশী রুজির উপায়-উপকরণ দান করতেন, তবে তার ফল এই হত যে, কেউ কারো পরাধীনতা স্বীকার করত না। প্রত্যেক ব্যক্তি ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি এবং সীমালঙ্ঘন করার ব্যাপারে অন্যের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকত। আর এইভাবে পৃথিবী বিপর্যয়ে ভরে যেত।
তবে সবাই নিজের জীবন-জীবিকা ও আয়-রোজকারে ভাবনামুক্ত, নিশ্চিন্ত থাকতে চান। রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে যে আয় করেন এতে বরকত প্রত্যাশা করেন। বেশকিছু আমল রয়েছে যার মাধ্যমে জীবনে বরকত আসে, অল্পতেও অনেক তৃপ্তি মেলে।
পাপাচার থেকে মুক্ত থাকা
এর জন্য অন্যতম বিষয় হলো পাপাচার থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা। কারণ নেক আমল ও ভালো কাজে যেমন মানুষের জীবন-জীবিকায় বরকত আসে, তেমনি পাপ কাজ জীবন-জীবিকার বরকত নষ্ট করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেবল দোয়াই ভাগ্য প্রতিহত করে, নেক কাজে আয়ু বাড়ে আর বান্দা পাপের কারণে জীবিকা থেকে বঞ্চিত হয়।’-(মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৪১৩)
হালাল পন্থায় আয়
রিজিকে বরকতের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, হালাল পন্থায় আয় করা। হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হালাল জীবিকা সন্ধান করা নির্ধারিত ফরজসমূহের পরে বিশেষ একটি ফরজ।’ (শুআবুল ইমান, বায়হাকি; কানযুল উম্মাল: ৯২০৩)। তিনি আরও বলেন, ‘সকল মুসলিম নারী ও পুরুষের ওপর হালাল উপার্জন ফরজ।’ (জামিউল আখবার: ১০৭৯)
তাকওয়া ও আল্লাহভীতি
তাকওয়া ও খোদাভীতি যে জীবিকা লাভের অন্যতম একটি উপায়, এ প্রসঙ্গে মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য নিষ্কৃতির পথ বের করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিজিক দেবেন।’ (সুরা তালাক, আয়াত : ২-৩)। হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) উপরোক্ত আয়াত দুটির তাফসির প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশাবলি পালন করে এবং তার নিষিদ্ধ কার্যাবলি থেকে বিরত থেকে তাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহতায়ালা তার জন্য সব বিপদাপদ থেকে মুক্ত হওয়ার পথ করে দেবেন এবং যেখান থেকে সে রিজিক লাভ করার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করে না; সেখান থেকে তাকে রিজিক দেবেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির ৪/৪০০)
দান করা
দান-সদকা মানুষের জীবনে বরকত নিয়ে আসে। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি খরচ করো, তোমার জন্য খরচ করা হবে (অর্থাৎ প্রাচুর্য আসবে)। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৩৫২)
আমলের পাশাপাশি একটি দোয়ার ওপর আমল করা যেতে পারে এতে আল্লাহ তায়ালা বরকত দান করবেন। দোয়াটি হলো-
আরবি :
اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
অর্থ : হে আল্লাহ! হারামের পরিবর্তে তোমার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করো। আর তোমাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী কোরো না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে স্বচ্ছলতা দান কর। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৩২১)
দৈনিক গাইবান্ধা