পলাশবাড়ীতে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ
প্রযুক্তির নানান উৎকর্ষে শক্তির ব্যবহার বেড়েছে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় শক্তিকে ঘোড়ার শক্তি বা অশ্বশক্তি দিয়ে পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার শুরু করেন; যা আজও বিদ্যমান।
উন্নত প্রযুক্তির যুগে দেশে গরু দিয়ে হালচাষ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। এই অবস্থায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মোখলেছুর রহমান (৫০) নামে এক কৃষক ঘোড়ার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হালচাষ করে এলাকায় সাড়া জাগিয়েছেন। তিনি একজোড়া ঘোড়া দিয়ে নিজে চাষ করা জমিসহ অন্যের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
জানা গেছে, উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের উত্তর দুর্গাপুর গ্রামের মোখলেছুর রহমান তার ঘরে স্ত্রী এবং এক ছেলে-মেয়ে রয়েছে। প্রথমে ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল পরিবহন করতেন। পরে অভাবের সংসারে আয়ের একমাত্র উৎস ঘোড়া দিয়ে হালচাষ শুরু করেন। নিজের কোনো জমি না থাকায় পরের জমি বর্গাচাষের পাশাপাশি টাকার বিনিময়ে অন্যের জমি চাষ করেন।
মোখলেছুর রহমান বলেন, ঘোড়াকে আমি বেশ ভালোবাসতাম। প্রথমে শখ করে একটি ঘোড়া কিনি। পরে ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করে মালামাল পরিবহন শুরু করি। চিন্তা করলাম ঘোড়া দিয়ে যদি গাড়ি চালানো যায়, তবে হালচাষও করা যাবে। এই ভেবে পরে আরও একটি ঘোড়া কিনে প্রশিক্ষণ দিয়ে জমি চাষ শুরু করি। এখন বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ঘোড়ার হাল দিয়ে জমি চাষে মাটির উর্বরতা বাড়ে। জমি বেশি খনন হওয়ায় চাষ ভালো হয়। ইরি-বোরো মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যায়। এলাকায় অনেক কৃষক এখন পাওয়ার টিলার বাদ দিয়ে আমার ঘোড়া হাল দিয়ে জমি চাষ করছি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ৩ থেকে সাড়ে ৩ বিঘা জমি চাষ করতে পারি। এতে আমার এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা আয় হয়। জমিতে হালচাষ বা মই দিয়ে প্রতিদিন যা পাই তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে। ঘোড়া দুটির খাবার খরচ হয় দৈনিক ৫০০ টাকা।
হজরত আলী নামে এক কৃষক বলেন, এলাকায় তো গরুর হাল নেই। পাওয়ার টিলার সময়মতো পাওয়া যায় না। তাই কম খরচে মোখলেছুর রহমানের ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করি। তুলনামূলকভাবে পাওয়ার টিলারের চেয়ে ঘোড়া দিয়ে চাষ ভালো হয়।
ওই গ্রামের মজনু মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করা এই প্রথম দেখলাম। অবাক হয়েছি খুব অল্প সময়ে এক বিঘা জমি চাষ করা সম্ভব। গরু বা মহিষ দিয়ে যেটা অসম্ভব। তাছাড়া ঘোড়ার হালে খনন বেশি হওয়ার জমি ভালোভাবে চাষ হচ্ছে। এতে জমির উর্বরতা বাড়ে। পাশাপাশি ফলনও ভালো হয়।
রফিকুল ইসলাম নামে একজন বলেন, মোখলেছুর খুবই গরিব মানুষ। তার ঘোড়া দুটি ছোট। টাকার অভাবে বড় ঘোড়া কিনতে পারছে না। সরকার বা অন্য কেউ তাকে ঘোড়া কিনতে সহযোগিতা করলে তার জন্য ভালো হবে। সে আরও বেশি জমি চাষ করতে পারবে।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার আরটিভি নিউজকে বলেন, জেলায় হালের বলদ কমে গেছে। ঘোড়া প্রকৃতিগতভাবে পরিশ্রমী পশু। তবে সঠিকভাবে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করা হলে কৃষিতে ভালো অবদান রাখতে পারবে। মোখলেছুরের ঘোড়ার হাল তার জীবিকা নির্বাহের পথ সৃষ্টি করেছে।
দৈনিক গাইবান্ধা