শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৫ অক্টোবর ২০২২

পলাশবাড়ীতে সফল কলাচাষী আব্দুল হান্নান

পলাশবাড়ীতে সফল কলাচাষী আব্দুল হান্নান
পলাশবাড়ী পৌরসভার মহেশপুর গ্রামের আদর্শ কলা চাষী ও জালাগাড়ী দূর্গাপুর দাখিল মাদ্রাসার সহকারি সুপার আব্দুল হান্নান ৪ বিঘা জমিতে কলা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তারা পাঁচ ভাই মোটে কলা চাষ করেছেন ১৭ বিঘা জমিতে। একবিঘা জমি থেকে কলা বিক্রি করেছেন ১ লাখ টাকা করে। খরচ বাদে তাদের লাভ হয় ৮০ হাজার টাকা করে।  সফল কলাচাষী আব্দুল হান্নান জানান, আমার বাবা মরহুম সৈয়দ আলী অত্রাঞ্চলের মধ্যে একজন আদর্শ চাষী ছিলেন। বাবা আমাদের পাঁচ ভাইকে লাঙলের ঠোঁটের পরিশ্রমে মাষ্টার্স পযর্ন্ত পড়িয়েছেন। আজ আমরা পাঁচ ভাই বিভিন্ন স্কুল-কলেজ,মাদ্রাসায় চাকুরী করছি। পাশাপাশি বাবার রেখে যাওয়া জমিগুলোতে চাষাবাদ করে বাবার মতই সফলতা এনেছি। আমাদের কোন কিছু হাটে কিনতে যেতে হয় না। সবকিছুই জমিতে ফলাচ্ছি। পুকুরে মাছ আছে,গাভী আছে। কলার জমির আইলে বিভিন্ন প্রকার সবজি লাগিয়েছি। আমি চারবিঘা জমিতে রঙিন সাগর কলা লাগাইছি। কলার ফলনও বাম্পার হয়েছে। এসব কলা জমি থেকেই ৪৫ হাজার টাকা শতকরা বিক্রি করে দিয়েছি। এক বিঘা জমিতে কলার গাছ ৩৬০ টি থেকে ৩৭৫ টি লাগানো যায়। আমার ছোট ভাই ৭ বিঘা জমিতে রঙিনসাগর কলা চাষ করেছে ওর কলাও বাম্পার হয়েছে। আমি এ পযর্ন্ত কলা বিক্রি করে আড়াই লাখ টাকা ঘরে তুলেছি। আরো দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পাব।  তিনি বলেন,  ভোর ৬ টায় উঠি, কলার জমিতে টুকিটাকি কাজ করি। কৃষাণ তো প্রতিদিন দুইজন করে আছেই। এরপর গোসল করে খেয়ে মাদ্রাসায় যাই। মাদ্রাসা থেকে এসে কলায় একপ্রকার কেঁচো বাকলের মধ্যে ধরে গাছ নষ্ট করে সেগুলোতে ম্প্রে করি। এরকম আরো অনেক কাজ নিজেকে করতে হয়। অলস মানুষের জন‍্য কলা বা কৃষি আবাদ নয়। এবছর প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ নেই। যে কারণে কলার ভালো ফলন পাচ্ছি। বাজারে রঙিন সাগর কলার ব‍্যাপক চাহিদা রয়েছে। বতর্মানে দেশে বিভিন্ন প্রকার কলা রয়েছে।
 
এগুলোর মধ্যে অমৃতসাগর,সবরি,কবরি,চাঁপা,মেহেরসাগর,কাবুলি,বিচিকলা,ও আনাজিকলা উল্লেখযোগ্য।সম্প্রতি বারিকলা-১,২,৩,ও ৪ জাতের উচ্চফলনশীল কলার জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব জাতের মধ্যে বারিকলা-১ পাকা কলার রঙ উজ্জ্বল হলুদ,খেতে বেশ সুস্বাদু।বারিকলা-২ খাটো জাতের। এর তরকারি খাওয়া যায়। বাজারে এসব কলার ব‍্যাপক চাহিদা রয়েছে।আশ্বিন থেকে কার্তিক,মাঘ থেকে ফাগুন এবং চৈত্র থেকে বৈশাখ -এ তিন সময়েই কলার চারা রোপন করা যায়। তবে আশ্বিন -কার্তিক মাসে রোপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। শিশু থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ বণিতা সবার কাছেই কলা একটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর খাবার।  এর গাছের পাতা ও বাকল পশু খাদ‍্য হিসেবে ব‍্যবহার হয়। গ্রামগঞ্জে এখনো এর মূল,খোল শুকিয়ে তা পুড়িয়ে ক্ষার তৈরি করা হয়। যা দিয়ে কাপড় খাচায় ব‍্যবহারের পাশাপাশি কলা গাছের মোচা ও থোড় দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।   এ উপজেলায় প্রায় দেড় যুগ থেকে বিভিন্ন কলার চাষাবাদ হয়ে আসছে। বতর্মানে কলাচাষ উপজেলার অনেক চাষীর অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে। এজন্য একরের পর একর জমি এবং বাড়ীর  আশেপাশে,ডোবা,নালার পাশে বিভিন্ন জাতের রঙিন সাগর কলা,চাম্পা কলা,মালভোগ কলা,কাঁচাকলার চাষ হচ্ছে। এটি ৮/৯ মাসের মাথায় কলার মোচা আসে। এতে পর্যাপ্ত পরিমান গোবর,ইউরিয়া  সার,পটাশ,ফসফেট মিশিয়ে জমি তৈরি করে তাতে সাড়ে তিন হাত ফাঁক করে কলা লাগাতে হয়।
 
কলাচাষীরা জানান, প্রথম চালান কলা কাটার পর গাছটি কেটে ফেলার পর তার গোড়ায় থেকে আবারও কলার কুশিগাছ হয়ে থাকে।সেই কুশি গাছ থেকে দ্বিতীয় চালান কলা হয়। এভাবে একজন চাষী দু’বার কলা বাজারজাত করেন। তবে দ্বিতীয়বারের কলা তেমন একটা ভালো ফলন হয় না। অন‍্য যেকোনো ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভ হয় কলা চাষে। ফলে অন‍্যান‍্য ফসলের পাশাপাশি এখন কলা চাষ বেশি হয়। বানিজ‍্যিকভাবে পলাশবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় রঙিন সাগর,মালভোগ ও চাম্পা কলার ব‍্যাপক চাষ করা হচ্ছে। ওইসব জাতের গাছ থেকে অল্প দিনেই ফল পাওয়া যায়। তুলনামূলকভাবে অন‍্যান‍্য ফসলের চেয়ে কলার দামও বেশি।     বর্তমানে হান্নানের দেখাদেখি মহেষপুর গ্রামে এখন অনেকেই কলা চাষ করেছেন। তাদের কলারও ব‍্যাপক ফলন হয়েছে।  আব্দুল হান্নানের জমিতে কলা কিনতে আসা ব‍্যবসায়ী বাদশা ও বুদা জানান,কলাচাষী হান্নান ভাইয়ের কলার মান ভালো এবং এসব কলার চাহিদা ঢাকায় বেশি সেকারণে আমরা তার কলা প্রতিবছর কিনে থাকি। এবছর কলা কিনেছি শতকরা ৪৫ হাজার টাকা দরে ৪শ কলার ছড়ি।
 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু জানান,কলা সর্বগুনে গুনায়িত একটি সর্বাকৃষ্ট একটি ফল। আমরা কলাচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে সর্বাত্বক সহযোগিতা অব‍্যাহত রেখেছি। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তাদের রোগ-বালাই ও তা রোধে বিভিন্ন পরামর্শ অব‍্যাহত রেখেছেন।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু