শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৮:৩২, ৪ মে ২০২২

ঈদে ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্রের ক্রসবাঁধ ও বধ্যভূমিতে দর্শনার্থীর ভীড়

ঈদে ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্রের ক্রসবাঁধ ও বধ্যভূমিতে দর্শনার্থীর ভীড়

ব্রহ্মপুত্র নদের বুক চিরে নির্মাণ হচ্ছে বধ্যভূমি রক্ষা প্রকল্পের আধা কিলোমিটার দীর্ঘ ক্রসবাঁধ। আর এ বাঁধকে কেন্দ্র করে নদের পাড়ে দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়। ঈদের আনন্দসহ এলাকার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গাইবান্ধাসহ আশপাশের উপজেলার ও বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ ভিড় করছেন একসময়ের উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার তিস্তামুখ রেলওয়ে ফেরিঘাট, ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে অবস্থিত ৭১-এর বধ্যভূমি, জেগে ওঠা চর-দ্বীপচরে। ঈদের দ্বিতীয় দিন সকাল থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশু-কিশোরসহ সব বয়সী দর্শণার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে এসব এলাকা।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদে বধ্যভূমি রক্ষা প্রকল্পের ক্রসবাঁধটি দীর্ঘ ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ১০০ ফুট এবং মাটির তলদেশ থেকে বাঁধটির উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট। যা কি না দুইতলা ভবনের মত উঁচু। সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ভ্রমণ পিপাসুরা বেছে নিয়েছেন নতুন এ বাঁধকে। নদের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন ও ইউএনও’র বাসভবন। পাশেই তিস্তামুখঘাট ও বধ্যভূমি এলাকা। নদীভাঙন থেকে রক্ষায় নীলকুঠি এলাকা থেকে ৭১-এর বধ্যভূমি এলাকার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় বাঁধা হয়েছে সিসি ব্লক দিয়ে। দর্শনার্থীদের বসার জন্য কিছুদুর পর পর তৈরি করা হয়েছে বেঞ্চ। ইট-পাথরে বন্দি নাগরিক জীবনে প্রশান্তির ছোঁয়া পেতে ঈদের ছুটিতে সব বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে ব্রহ্মপুত্রের পাড়। নদের বুকে জেগে ওঠা বালুচরও ভ্রমণপিপাসুদের আরেক ঠিকানা। বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে সবাই ছুটে আসেন এখানে। প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে নির্মল আনন্দের পরশ পেতে নদী পাড়ে বসে আড্ডা, সেলফি তোলা।

নৌকায় চড়ে ঘুরে বেড়ানোর পর ক্রসবাঁধে দাঁড়িয়ে সাঘাটা উপজেলার হাটভরতখালীর চাল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে আর চরে ঘুরে বেড়ানোর মজাটাই আলাদা। এখানে রয়েছে প্রকৃতির বিশালতা। নদীর বুক চিরে নির্মিত হচ্ছে ক্রসবাঁধ যা আমাদের নজর কেড়েছে। পুরোপুরিভাবে বাঁধটি নিমার্ণ হলে আগামী কোরবানি ঈদে এখানে মানুষের ঢল নামবে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে।

কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করছিলেন গজারিয়া গ্রামের তরুণী আফরুজা আক্তার। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে রাজশাহী থেকে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে। নির্মল বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার জন্য।

স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, এ এলাকায় তেমন দর্শনীয় স্থান নেই। সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষার পর সেখানে নদীর পার যেমন পর্যটন এলাকায় পরিণত হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে এ ক্রসবাঁধটি ফুলছড়িকে একধাপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করেছে। এখানে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসছেন বাঁধটি দেখতে। এক সময় এখানে সব ছিল। নদীর করাল গ্রাসে ফুলছড়িবাসী সব হারিয়ে ফেলেছে। দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিত লাভ করলে অনেকেই এটাকে ঘিরে ব্যবসা-বাণিজ্য করে সংসার চালাতে পারবে।

গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জিহাদুল ইসলাম মওলা জানান, এ বাঁধকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার দর্শনার্থী বেড়াতে আসছেন। বাঁধের ৭০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। ৭১-এর বধ্যভূমিকে রক্ষাকে করতে ব্রহ্মপুত্র নদে দেওয়া হচ্ছে এ ক্রসবাঁধ। কোরবানির ঈদে এখানে আরও বেশি মানুষের ঢল নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্ষায় এ বাঁধের সৌন্দর্য আরও বেশি সুন্দর দেখাবে। তখন বাঁধের তিন পাশে নদের পানি থাকবে।

ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কাওছার আলী বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা যাতে নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা এবং কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সেজন্য আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাড়তি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ