গাইবান্ধা থেকে তিন ‘জিনের বাদশা’কে আটক করলেন পিবিআই
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ থানা এলাকা থেকে জিনের বাদশা পরিচয়ে প্রতারণা করা তিন চাঁদাবাজদের গ্রেফতার করেছে যশোর পিবিআই। ‘ফেরেস্তা পরিচয়ে আল্লাহর কুদরত থেকে এসেছে’ বলে যশোরের এক তরুণীর কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ প্রায় চার লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই তিন প্রতারক। গত ২৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ থেকে যশোরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তাদের আটক করে।
এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় শনিবার তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুদ্দীন হোসাইন জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাদের জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন।
আটককৃতরা হলো, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দেবত্তর-রামনাথপুর গ্রামের ওসমান সরকারের ছেলে সেলিম সরকার, সুন্দইল গ্রামের মৃত আকাম উদ্দিনের ছেলে দুদু মিয়া ও মথুরাপুর গ্রামের জিতেন্দ্রনাথ মোহন্তের ছেলে তাপস মোহন্ত।
যশোর সদর উপজেলার পাগলাদাহ গ্রামের এএনএম সোহরাব হোসেন মামলায় বলেছেন, তার মেয়ে এইচএসসি পাস করার পরে বর্তমানে বাড়িতেই থাকে। গত ৪ অক্টোবর গভীর রাত ১টার দিকে আটক সেলিম সরকারের ব্যবহৃত মোবাইল থেকে ওই মেয়েটির মোবাইল ফোনে রিং করে নিজেকে ফেরেস্তা পরিচয় দেয়া হয়। আর ওই ফেরেস্তা আল্লাহর কুদরত থেকে এসেছে এই কথাও বলে। এরপর মেয়েটিকে জায়নামাজের উপরে কোরআন শরীফ নিয়ে বসতে বলে। এসময় মেয়েটির মায়ের অসুস্থতার কথা শোনে। পরে তার মাকে সুস্থ করার জন্য জায়নামাজ ও উট কেনার কথা বলে মেয়েটির কাছে টাকা দাবি করে। এরপরে বিভিন্ন সময়ে বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে নিয়ে ৯২ হাজার ৫শ’ টাকা। একটি স্বর্ণের মূর্তি দেয়ার লোভ দেখিয়ে ৬ অক্টোবর ওই প্রতারক চক্র বাড়িতে থাকা সকলের স্বর্ণালংকার খয়েরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেটের মধ্যে মেহগণি গাছে গোড়ায় রেখে আসতে বলে। সেখানে ৪ ভরি ওজনের বিভিন্ন স্বর্ণালংকার রেখে আসে মেয়েটি। পরে তাকে মোবাইল ফোনে জানায় পালবাড়ি ভাস্কর্যের মোড়ের সিঙ্গার শো-রুমের সামনে একটি আম গাছের পাশে বৈদ্যুতিক খাম্বার গোড়ায় পটেটো ক্রেকার্সের একটি প্যাকেটে থাকা স্বর্ণের মুর্তি নিয়ে আসতে বলে। মেয়েটি সেখান থেকে ওই মুর্তি নিয়ে বাড়িতে এসে তার বাবাকে জানায়। তার বাবা মুর্তিটি দেখে বুঝতে পারেন ওটা স্বর্ণের নয় পিতলের তৈরী। আর মেয়েটিও প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে। পরে তার বাবার কাছে বলছে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকারসহ ৩ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রটি। এই ব্যাপারে মেয়েটির বাবা যশোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অফিসে অভিযোগ করেন। পিবিআই’র এসআই মিজানুর রহমান ঘটনা শুনে মেয়েটি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছে বলে প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারেন। এই ঘটনায় মেয়ের বাবার দেয়া অভিযোগটি কোতোয়ালি মডেল থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ। এরপরে পিবিআই’র একটি টিম গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় প্রথমে এই ঘটনার সাথে জড়িত সেলিম সরকারকে ২৬ নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এসময় মেয়েটির সাথে কথা বলা মোবাইল নম্বরের সীম কার্ড উদ্ধার করে। এরপর সেলিমের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একইদিন বেলা ১১টার দিকে দুদু মিয়াকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। পরে মথুরাপুর বাজারের আজাদের চায়ের দোকানের সামনে থেকে তাপস মোহন্তকে আটক করা হয়। গতকাল শনিবার তাদের তিনজনকে এই মামলায় যশোর জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এসময় তারা প্রতারণার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
দৈনিক গাইবান্ধা