শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

বদলে যাবে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের ভাগ্য

বদলে যাবে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের ভাগ্য

সমতলে বাস করা অন্যতম প্রধান ক্ষূদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে তারা নিজেদের কৃষি পেশাকে প্রাধান্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। হাল সময়ে অনেকেই চিরাচরিত পেশাকে পরিবর্তন করলেও এখন তাদের প্রধান পেশা কৃষি কাজ। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের ভাগ্য পরিবর্তনের দ্বার ভুলে দিচ্ছে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত। উপজেলার সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারে গড়ে উঠবে দেশের ১০ম ইপিজেড রংপুর রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (আরইপিজেড) । আর এই আরইপিজেডে প্রথম সাঁওতালদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা, কাটাবাড়ি, রাজাহার, শাখাহার, কামদিয়া ও গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নে মূলত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বাস। উপজেলার এই ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ১১ হাজার সাঁওতাল সম্প্রদায় বাস করে। বর্তমানে শিক্ষার হার বেড়ে গেছে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মাঝে। অনেকেই কৃষি পেশা বাদ দিয়ে অন্য পেশায় কাজ করছে। সরকার উপজেলার সাপমারা ইউনিয়নের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারের জমিতে আরইপিজেড গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের নিজের দখলে থাকা বাণ্যিজিক খামারের ১৮৩২ একর জমিতে আরইপিডেজ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইপিজেড স্থাপনে বদলে যাবে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ভাগ্য। ইপিজেডে প্রথম কর্মসংস্থান হবে দক্ষ অদক্ষ সাঁওতালদের।

গত ২৪ আগস্ট বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল নজরুল ইসলাম আরইপিজেডের জন্য নির্ধারিত জায়গা পরিদর্শন করেন। গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাণিজ্যিক খামারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় আরইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে জেলা প্রশাসক সহ জেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সবার আগে সাঁওতালদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে।

আরইপিজেডের জন্য নির্ধারিত জায়গা সাহেবগঞ্জ বাণ্যিজিক খামারের পশ্চিশ অংশ সংলগ্ন সাঁওতাল পল্লী মাদারপুর জয়পুর পাড়া। ওই পাড়ার পাশ্ববর্তী অবস্থান শাহজাহান বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহীন সরকার জানান, তাঁর বিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ জন সাঁওতাল ছাত্র অধ্যয়ন করে। তারা অন্য শিক্ষার্থীদের তুলনায় ভালো করছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ শেষে তারা বিভিন্ন সম্মানজনক পেশায় যুক্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই সাঁওতাল শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে বলে তিনি জানান।

উপজেলার সাঁওতালদের প্রধান নেতা পেশায় চিকিৎসক ফিলিমন বাস্কে বলেন, সাঁওতালরা মূলত কৃষি কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে। ১৯৫৪ সালে যখন চিনিকল প্রতিষ্ঠিত তখন মাত্র ২জন সাঁওতালের স্থায়ী চাকুরি হয়েছিলো। যদিও তখন দৈনিক মজুরিতে অনেক সাঁওতাল খামারে কাজ করতো জানিয়ে তিনি আরও বলেন, বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে অদক্ষ এই সাঁওতালদের কিভাবে কাজে লাগানো হবে তা নিয়ে তারা সংশয়ে আছেন। সাঁওতালরা তাদের কৃষি কাজ নিয়ে থাকতে চান বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাইদ বলেন, শুধু ইপিজেডে যে সমতলের সাঁওতালদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হবে তা নয়। ইতিমধ্যেই উপজেলার ভুমিহীন সাঁওতালদের জন্য উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের পলুপাড়া ফুলহারে গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঘর বরাদ্দ করা হচ্ছে। সাঁওতাল শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ হিসেবে নিয়মিত বাইসাইকেল প্রদান করা হচ্ছে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ