শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

৬ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রাচীন মসজিদ!

৬ ফুট দৈর্ঘ্যের প্রাচীন মসজিদ!

একটি মাত্র গম্বুজের ছোট্ট একটি মসজিদ। ভেতরটা দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে মাত্র ছয় ফুট। কে ঠিক কত বছর আগে কেন মাত্র চার-পাঁচজনের নামাজ আদায়ের যোগ্য মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন, তা জানা নেই কারো। প্রাচীন স্থাপত্য শৈলী ও আরবি হরফ মুদ্রিত এ মসজিদকে ঘিরে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই।

কে কখন এটি নির্মাণ করেছেন, তার সঠিক কোনো তথ্য না থাকলেও এলাকায় জনশ্রুতি আছে, সাতশ’ বছর আগে এক রাতে অলৌকিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে মসজিদটি।

বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও সংস্কার করলে মসজিদটিতে এখনও নামাজ আদায় করা সম্ভব বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
মসজিদটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পৌরশহরের নুনিয়াগাড়ি গ্রামে অবস্থিত। পাশেই রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক ও পশ্চিম পাশ দিয়ে গেছে পলাশবাড়ী-ঘোড়াঘাট সড়ক। দুই সড়কের ঠিক মাঝখানে নুনিয়াগাড়ী গ্রামের বুক চিড়ে নির্মিত পিচঢালা সড়কের দক্ষিণে অবস্থিত ঐতিহাসিক এ মসজিদটি। পলাশবাড়ী জিরো পয়েন্ট চৌমাথা মোড় থেকে মসজিদটির দূরত্ব আধা কিলোমিটার।

এটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট ছোট একটি মসজিদ, যা প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। যা কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে। এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। অন্তত আড়াইশ’ বছরের পুরনো এ মসজিদটি এক কক্ষ বিশিষ্ট। এর উপরিভাগে একটি গম্বুজ এবং চার কোণায় রয়েছে চারটি পিলার। ইমামসহ চার থেকে পাঁচজনের নামাজ আদায়ের জায়গা রয়েছে প্রাচীন এ মসজিদটিতে। মসজিদটির ভেতরে দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে মাত্র ছয় ফুট জায়গা রয়েছে।

স্থানীয় কেরামত উল্লাহ মণ্ডলের ছেলে কাদিরবক্স মণ্ডলের নামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হয়েছে। কিন্তু মসজিদটির নাম নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। এলাকাবাসী ও  তার বংশধরেরা বলছেন, তিনি এটি নির্মাণ করেননি।

নুনিয়াগাড়ি গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সভাপতি রেজানুর রহমান ডিপটি বলেন, ধারণা করা হয়, এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলের। বিভিন্ন সময় স্থানীয়ভাবে ও সরকারিভাবে মসজিদটির ইতিহাস উদঘাটনের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ১৯৯১ সালে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্বে আসেন আব্দুল মালেক। তৎকালীন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক ছিলেন আব্দুস সবুর। তারা মসজিদটি পরিদর্শন করেন এবং এটির ইতিহাস উদ্ঘাটনের জন্য স্থানীয়দের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন। সেই কমিটির সদস্যরা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের মাস্তা এলাকার প্রাচীন লাল মসজিদ ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ওসমানপুর এলাকার প্রাচীন সৌর মসজিদ দেখে ধারণা করেন যে এটি নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলের। কারণ নবাব সুজা-উদ-দৌলার আমলে মাস্তা ও ওসমানপুরে নির্মিত মসজিদ দু’টির আদলেই গড়া হয়েছে নুনিয়াগাড়ি গ্রামের মসজিদটি।

মণ্ডল পরিবারের সদস্য আব্দুল মতিন মণ্ডল জানান, মসজিদটি সংরক্ষণের জন্য জেলা-উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০১৩ সালের ২ জুন মসজিদটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ফলে মসজিদটি রংপুর বিভাগের মধ্যে প্রাচীন স্থাপত্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মসজিদটির স্মৃতি রক্ষায় এর পূর্ব পাশে নতুন বড় একটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। যেখানে এলাকাবাসীসহ দূর-দূরান্ত থেকে প্রাচীন মসজিদটি দেখতে আসা ধর্মপ্রাণ মানুষ নামাজ আদায় করে থাকেন। আমি নবনির্মিত মসজিদ কমিটির সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করছি।  
প্রাচীন ইসলামিক ঐতিহ্যের এক অন্যন্য নিদর্শন এ মসজিদটি রক্ষায় সংস্কারের দাবি জানান তিনি।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ