বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:০১, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

এসপি জিহাদুলের জীবন ও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প

এসপি জিহাদুলের জীবন ও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার গল্প

বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক, মা গৃহিণী। সংসারের পরিধিটাও ছিল ব্যাপক। নয় ভাই-বোনের বড় সংসার একা টেনে নিয়েছিলেন বাবা। সবাইকে করেছেন শিক্ষিত। পরিবারের সবাই গ্রাজুয়েশন ডিগ্রিধারী। তিনি ছিলেন সবার ছোট। লেখাপড়ায় বেশ মেধাবী। ২০তম বিসিএসে একবারই অংশগ্রহণ করে বাজিমাত করেছেন। প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম বারই সুযোগ হয়ে যায় বাংলাদেশ পুলিশে। কর্মজীবনেও সফল তিনি। এতক্ষণ যার কথা বললাম তিনি এসপি জিহাদুল কবির। তার সফলতার গল্পঃ

জীবনের শুরু: ১৯৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার কাজাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জিহাদুল কবির। বাবা আহম্মদ আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মা আয়েশা গৃহিণী। ছয় বোন-তিন ভাইয়ের সংসারে জিহাদুল সবার ছোট। ছোটবেলা থেকেই বাবার আদর্শকে বুকে লালন করে পথ চলেন। পড়াশোনা তাকে বেশ আকৃষ্ট করতো। তাই সব কিছুর উপরে পড়াশোনাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন বেশি। খুব ডানপিটে স্বভাবের না হলেও ক্রিকেটের প্রতি খুব ঝোঁক ছিল তার। পাড়ার মাঠগুলো চষে বেড়াতেন।

শিক্ষায় ঝোঁক: পরিবারের সবাই উচ্চশিক্ষিত। যেহেতু তিনি ছোট, তাই মনে সব সময়ই চিন্তা থাকতো তাকেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে হবে। ১৯৯০ সালে কাড়াপাড়া শরৎচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৯২ সালে বাগেরহাট পিসি কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। ১৯৯৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ইন ফরেস্টি বিভাগে বিএসসি পাস করেন।

প্রকৌশলীর স্বপ্ন: ছোটবেলা থেকেই জিহাদুল কবিরের ধ্যান-জ্ঞান ছিল একজন প্রকৌশলী হওয়া। কিন্তু বড় হয়ে ইচ্ছে বদলে মনযোগ দেন বিসিএস পরীক্ষায়। টানা দু’বছর ঢাকায় চার বন্ধুসহ বাসা ভাড়া নিয়ে দিন-রাত পড়তে থাকেন। অবশেষে প্রকৌশলীর বদলে হয়ে গেলেন বিসিএস কর্মকর্তা।

বিসিএসের গল্প: পড়াশোনায় তিনি এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিলেন যে, একটা সময় সফলতা তাকে ধরা দিয়েছে। ২০তম বিসিএসে অংশগ্রহণ করে প্রথম বারই সফল হয়ে গেলেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

কর্মজীবন: বিসিএসের আগে তিনি একটি সরকারি চাকরি করতেন। এসিএফ কক্সবাজারে। সেখানে দু’বছর কাজ করেন তিনি। এরপর ২০০১ সালে ২০তম বিসিএস পরীক্ষায় টিকে গেলে চাকরি ছেড়ে যোগ দেন পুলিশের এএসপি হিসেবে। প্রথম পোস্টিং হয় গৌরনদী সার্কেল (এএসপি) হিসেবে। এরপর সীতাকুণ্ড, ঢাকা মেট্রো, এসি ডিবি, এসি এমটি, এডিসি ট্রান্সপোর্টে কর্মরত ছিলেন। এরপরই আসে মিশনের পালা। ২০০৬ সালে এক বছরের জন্য চলে যান আইভরি কোস্ট। সেখান থেকে ফিরে গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। এরপর আবার ঢাকা মেট্রোর এডিসি হিসেবে যোগ দেন। সেখান থেকে আবার মিশনে চলে যান লাইবেরিয়া। সেখানে থেকে ফিরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে ঝিনাইদহ জেলায় নিযুক্ত হন। ২০১২ সালে প্রথম পুলিশ সুপার হিসেবে মাগুরা জেলায় নিযুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে তিনি রাজবাড়ী, পাবনা হয়ে বর্তমানে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সফলতা: বিসিএস পরীক্ষায় টিকে যাওয়াই তার বড় সফলতা। এছাড়া কর্মজীবনে মানুষের ভালোবাসাকেও সাফল্য হিসেবে দেখছেন। কর্মজীবনে সফলতার মধ্যে পাবনায় চরমপন্থীদের উৎখাত করা। তিনি সেখানে যোগ দেওয়ার পর চরমপন্থীদের শীর্ষ নেতারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। তিনি এ পর্যন্ত ৪টি জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে জনগণকে সেবা দিয়ে এসেছেন।

স্বীকৃতি: ২০০৭ সালে ‘ইউএন মেডেল ফর দ্য সার্ভিস ফর পিস ইন আইভরি কোস্ট’ লাভ করেন। এছাড়া ২০১০ সালে একই পুরস্কার লাইবেরিয়াতেও পান। ২০০৯ ও ২০১১ সালে আইজিপি ব্যাজ, ২০১৪ সালে পিপিএম পদক লাভ করেন।

 জিহাদুল কবির  বলেন, ‘আপনি যদি কাউকে সম্মান করেন, তাহলে আপনি সম্মান পাবেন। সম্মান না করে সম্মান পাওয়ার আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছু নয়।’ তিনি বিশ্বাস করেন, যেখানে তিনি গিয়েছেন, মানুষের সাথে ভালো আচরণ করেছেন। বিনিময়ে তিনি যেমন ভালোবাসা পেয়েছেন, তেমনি সাধারণকেও ভালোবাসা দিয়েছেন।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ