• মঙ্গলবার   ২৮ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৩ ১৪২৯

  • || ০৫ রমজান ১৪৪৪

ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষ, সাগর আলী এখন সফল উদ্যোক্তা

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

ইউটিউব দেখে মাশরুম চাষে আগ্রহী হন নওগাঁর সবজি বিক্রেতা সাগর আলী। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে অল্প পুঁজিতে প্রথমে ছোট পরিসরে শুরু করেন মাশরুম চাষ। আর তাতে খুব কম সময়ের মধ্যে লাভের মুখ দেখছেন তিনি।

সাগর আলীর মাশরুম এখন যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, পাইকারী, খুচরা বিক্রেতাসহ সাধারণ মানুষের হাতে। তার সংসারে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। শুধু তাই নয়, তাকে দেখে পাশের মানুষ এখন আগ্রহী হয়ে উঠছেন মাশরুম চাষে।

সাগর আলীর বাড়ি নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তপুর ইউনিয়নের বেনী-ফতেপুর গ্রামে। 

সরেজমিন, দুই কাঠা জমির ওপর টিনের ঘর তৈরি করে মাশরুম খামার করছেন সাগর। ওই ঘরে কটের সুতো দিয়ে ঝুলে রাখা হয়েছে পলিথিনে মোড়ানো ৩০০ মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট)। সেই পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাচ্ছে মাশরুম। সেখান থেকেই কেটে বাজারজাত বা বিক্রি করছেন তিনি। এছাড়াও প্রতিদিন তার খামারে মাশরুম কিনতে ও দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন অনেকে। আবার কেউ কেউ আগ্রহী হয়ে উঠছেন পুষ্টি গুণে ভরপুর এই মাশরুম চাষে।

সাগরের খামার দেখে কী বলছেন অন্যরা

খামার দেখতে আসা স্থানীয় সাজ্জাদ আলী বলেন, সাগর ভাই তার বাড়ির পাশে মাশরুম চাষ করেছেন এজন্য দেখতে এসেছি। মাশরুম চাষ সম্পর্কে আমাদের আগে জানা ছিল না। এমনকি মাশরুমের নামও জানা ছিল না। তিনি কম খরচে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাই ভাবছি তার কাছ থেকে শিখে আমিও মাশরুম চাষ করবো।

হামিদুর রহমান নামে আরেকজন বলেন, মূলত এখানে এসেছি মাশরুমের খামার দেখতে। দেখে খুবই ভালো লাগলো। শুনলাম মাশরুম চাষে তেমন কোনো খরচ নেই। আমিও উদ্যোগ নেবো। 

নওগাঁ শহর থেকে মাশরুম কিনতে আসা আব্দুল আল মামুন বলেন, স্বাস্থ্যকর খবারের মধ্যে মাশরুম অন্যতম। চোখ, ডায়াবেটিস, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণসহ এই খাবার শরীরের জন্য অনেক উপকারী। কিন্তু আমাদের এলাকায় সেভাবে মাশরুম পাওয়া যায় না। আমার এক ছোট ভাই এখান থেকে মাশরুম কিনে খেয়ে ভালো লেগেছে। এই জন্য তার কথা শুনে আমিও মাশরুম কিনতে এখানে এসেছি। এখানে এসে একদম টাটকা মাশরুম কিনলাম, দামও কম। 

সদরের কুমড়িয়া এলাকার মাহবুব আলম এখানকার নিয়মিত ক্রেতা। তিনি জানান, আমরা মাশরুম সুপার শপ থেকে কিনে খেয়েছি। এখন বাড়ির কাছে সাগর ভাই মাশরুম চাষ করেছেন। অবশ্যই এটি ভালো উদ্যোগ। তার এই মাশরুম চাষ দেখে অনেক বেকার যুবক উদ্বুদ্ধ হলে স্থানীয়ভাবে একটি ভালো বাজার গড়ে উঠবে।

শুরুর কথা

সাগর আলী নওগাঁ শহরের সিও অফিস বাজারে ছোট্ট একটা দোকান বসিয়ে সেখানেই সবজি বিক্রি করেন। এক বছর আগে সবজি বিক্রির ফাঁকে ইউটিউবে মাশরুম চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার একটি ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন। এরপর নিজেই উদ্যোক্তা হতে যশোরের মাগুরা ড্রিম মাশরুম সেন্টারে গিয়ে চার দিনের প্রশিক্ষণ নেন। 

প্রশিক্ষণ নিয়ে আসার সময় সেখান থেকে অল্প কিছু বীজ পান সাগর। সেই বীজ নিয়ে এসে এক হাজার ৬০০ টাকা খরচ করে প্রথমে ৩০টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) তৈরি করেন। সেখান থেকে সাত হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেন। মাশরুম চাষে লাভ দেখতে পেয়ে পাহাড়পুর বাজারে একটি ঘর তৈরি করে সেখানে ছয় মাস মাশরুম চাষ করেন, লাভও করেন বেশ। পরে বাড়ির পাশে নিজের দুই কাঠা জায়গায় ঘিরে সবজি বিক্রির পাশাপাশি মাশরুম চাষ শুরু করেন। 

সাগরের খামারের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে সাগরের খামারে ৩০০টি অয়েস্টার জাতের মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) রয়েছে । তিনি জানান, সবকিছু মিলে প্রায় সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে। একেকটি স্পন প্যাকেট তৈরি করার ৩০ দিন পর থেকে মাশরুম আসা শুরু হয়েছে। গত সাত-আট দিন থেকে মাশরুম উঠতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৯ হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেছেন সাগর।

কেমন চলছে বিক্রিবাট্টা

সাগর আলী জানান, প্রথম অবস্থায় একটি স্পন প্যাকেট থেকে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকার মাশরুম বিক্রি হচ্ছে । এভাবে আরও দুই মাস একেকটি স্পন প্যাকেট থেকে চার বার মাশরুম পাওয়া যাবে। বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন চাইনিজ রেস্টুরেন্ট থেকে অর্ডার পাচ্ছি। প্রতি কেজি পাইকারী ২৫০ টাকা ও খুচরা ৩০০ টাকা বিক্রি করছি। আশা করছি লাভবান হবো। সামনে আরও বড় পরিসরে করার পরিকল্পনার কথা জানান সাগর।

যেভাবে মাশরুমের চাষ করা হয়

সাগর আলী বলেন, মাশরুম উৎপাদন করা খুব সহজ। মাশরুম চাষের জন্য এক থেকে দেড় ইঞ্চি করে খড় কাটতে হবে। এরপর সেদ্ধ করে হালকাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনের প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে। প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। দিনে ৩-৪ বার পানি দিতে হয়। সাধারণত ২৫-৩০ দিনের মধ্যে পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাবে যাকে মাইসেলিয়াম (মাশরুমের ছাতা) বলে। এরপর মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়। 

মাশরুম নিয়ে যা বললেন কৃষি কর্মকর্তা

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু হোসেন বলেন, মাশরুম একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। মাশরুম ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগের জন্য অনেক উপকারী। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন মাশরুম চাষ শুরু হয়েছে। চাইনিজ রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং মানুষজন ধীরে ধীরে এর ব্যবহারে অভ্যস্ত হচ্ছে । আমি মনে করি খুব অল্প জায়গায় ও অল্প পুঁজিতে মাশরুম চাষ করা যায় এবং এটি লাভজনক একটি ব্যবসা।

দৈনিক গাইবান্ধা
দৈনিক গাইবান্ধা