দৈনিক গাইবান্ধা
  • বৃহস্পতিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ১৯ ১৪৩০

  • || ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

ব্যাংকিং খাতে নজরদারি বাড়াচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দৈনিক গাইবান্ধা

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২২  

সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কারপ্রাপ্ত ইসলামী ব্যাংক এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ব্যাংক থেকে দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ একসঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

এ ছাড়া কে কীভাবে বিপুল পরিমাণ টাকা ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ দিল তা শিগগির প্রধানমন্ত্র্রীর কার্যালয়কে জানানো হবে। সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাংক খাতে নামে-বেনামে ঋণের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকের দিকে নজর বাড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংকে সরেজমিন পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে কারা কীভাবে ঋণ নিয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কারা অনিয়মের সঙ্গে যোগসাজশ করেছে তাদেরও খুঁজে বের করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে, অনিয়মের ক্ষেত্রে শুধু এককভাবে ঋণ গ্রহীতা দায়ী নয়। এর সঙ্গে অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাও জড়িত।

এদিকে ব্যাংকের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত রোববার প্রধানমন্ত্রী সচিব সভায় ব্যাংক সম্পর্কে বেশ কিছু কথা বলেন। একই সঙ্গে ব্যাংকের সার্বিক বিষয়ে জানাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এ উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে ব্যাংকের সার্বিক চিত্র জনসম্মুখে আনতে নারাজ বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের টাকা তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কেন তুলছেন? এই প্রশ্নে একজন গ্রাহক জানান, পত্রিকায় যে ধরনের নিউজ ছাপা হচ্ছে তাতে ব্যাংকে টাকা রাখা এখন নিরাপদ কি না তা নতুনভাবে ভাবতে হচ্ছে।

ইসলামী ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি ব্যাংকের ঋণের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাকিং খাতে কোনো ধরনের নেতিবাচক মনোভাব যেন তৈরি না হয় সে বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।

তিন ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির তথ্য সংগ্রহ শুরু দুদকের : ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩৪ হাজার কোটি টাকার ঋণ অনিয়মের ঘটনা অনুসন্ধানে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচ আইনজীবীর পাঠানো চিঠির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন এ কথা জানান। এর আগে তিন ব্যাংক থেকে কেলেঙ্কারির ঘটনায় তিনটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে দুদক ও বিএফআইইউর কাছে তদন্ত চেয়ে চিঠি দেন দেশের পাঁচজন আইনজীবী।

দুদক সচিব বলেন, আইনজীবীদের চিঠি আমার হাতে এখনও (গতকাল বিকাল ৩টা) পৌঁছায়নি। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংবাদটি পাওয়ার পর যাতে অনুসন্ধান শুরু করা যায় সেই লক্ষ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হলে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।

দুদক, সংশ্লিষ্ট আইনজীবী ও গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে ঋণ প্রদানে ব্যাংক তিনটির অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। নানা উপায়ে ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ বের করে নেওয়ার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত লেনদেন প্রতিফলন হয়েছে। জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান ও নামসর্বস্ব কোম্পানিকে ঋণ প্রদানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠে এসেছে।

তিন ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে দুদকে চিঠি : দুদকে চিঠি দেওয়া সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের একজন জানান, ইসলামী ব্যাংকের ‘নিয়ম বহির্ভূত’ লেনদেনের অনুসন্ধান করার জন্য পাঁচজন আইনজীবী দুদক ও বিএফআইইউর কাছে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার দেওয়া চিঠিতে তারা নিজেদের ইসলামী ব্যাংকের নিয়মিত গ্রাহক হিসেবে পরিচয় দেন। চিঠি দেওয়া পাঁচ আইনজীবী হলেন-মোহাম্মদ শিশির মনির, আবদুল্লাহ সাদিক, মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ, যায়েদ বিন আমজাদ ও শায়খুল ইসলাম ইমরান।

দুদকে দেওয়া চিঠি সূত্রে জানা গেছে, চিঠিতে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে হওয়া বিভিন্ন প্রতিবেদনের কথা তুলে ধরা হয়। পত্রিকার রিপোর্টে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ম বহির্ভূত লেনদের প্রতিভাত হয়েছে জামানত ছাড়া ঋণ প্রদান, নামসর্বস্ব কোম্পানিকে ঋণ প্রদানের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠে এসেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ‘গভীরভাবে অনুসন্ধানের জন্য’ দুদক চেয়ারম্যানের প্রতি অনুরোধ জানান আইনজীবীরা। তদন্তের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করা হয়।

দৈনিক গাইবান্ধা
দৈনিক গাইবান্ধা