বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৩:৩৩, ১৩ জুন ২০২২

কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ শেষ

কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ শেষ

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ নিয়ে এবার আর লুকোচুরি করা হয়নি। ৩০ জুন ঢালাও কালোটাকা সাদা করার সুযোগের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই সুবিধায় নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ এবং জমি-ফ্ল্যাট কিনে কালোটাকা সাদা করা যাচ্ছে। প্রতিবার এই ধরনের সুযোগের মেয়াদ শেষ হলে কিছু বলা হয়নি। এবার বাজেট ঘোষণার সময় বলে দেওয়া হলো, এই সুযোগ আর থাকছে না।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াসংক্রান্ত দুটি ধারা সম্পর্কে অর্থবিলে বলা হয়েছে, ১৯ এএএএ ও ১৯ এএএএএ ধারা বিলোপ হবে। কালোটাকা ঢালাওভাবে সাদা করার সুযোগ আর না দেওয়ার অন্যতম কারণ, খুব বেশি মানুষ এই সুযোগ নেননি। ২৫ শতাংশ কর ও এর ওপর ৫ শতাংশ জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করায় উৎসাহ দেখা যায় না। করহার কম থাকায় গতবার ১২ হাজার কালোটাকার মালিক এই সুযোগ নিলেও এবার ৯ মাসে মাত্র আড়াই হাজার ব্যক্তি এই সুযোগ নিয়েছেন।

কালোটাকার ঢালাও সুযোগ শেষ হলেও আয়কর অধ্যাদেশে অপ্রদর্শিত আয় দেখানোর সুযোগ ঠিকই রাখা আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের অর্থ আইনে দেখা গেছে, ১৯ বিবিবিবিবি নামে একটি ধারা সংযোজন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই অধ্যাদেশে যা-ই থাকুক না কেন, এলাকাভেদে ও আয়তনভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে ফ্ল্যাট কিনলে ওই বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে ধরে নেবে এনবিআর।

পরোক্ষভাবে অপ্রদর্শিত টাকায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে আয়ের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে কি না, তা পরিষ্কার করা হয়নি। ২০২০-২১ অর্থবছরেও ১০ শতাংশ কর দিয়ে নগদ টাকা, ব্যাংকে রাখা টাকা এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য সব সরকারের আমলেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়, দু-একবার ছাড়া কোনোবারই তেমন সাড়া মেলেনি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ হিসাবে, চলতি অর্থবছরের গত জুলাই থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত সব মিলিয়ে ২ হাজার ৫৮১ জন কালোটাকা সাদা করেছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৯৮ জন কালোটাকায় ফ্ল্যাট ও জমি কিনেছেন কিংবা নগদ টাকা কিংবা সঞ্চয়পত্র, এফডিআরের টাকার উৎস বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে কালোটাকা নিয়ে শেয়ারবাজারে গেছেন ৭৪ জন বিনিয়োগকারী। ফ্ল্যাট ও জমি ছাড়া ৩০০ কোটি টাকার মতো কালোটাকা সাদা হয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, এ ধরনের সুযোগ দেওয়া নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। বছর বছর এই সুযোগ দিলেও আগ্রহ কমে যায়। কারণ, কালোটাকার মালিকেরা মনে করেন, এই সুযোগ বারবার আসবে। যতক্ষণ চাপে না পড়বেন, ততক্ষণ এই সুযোগ নেবেন না।

এদিকে শিল্প খাতে কালোটাকা সাদা করার সুযোগের মেয়াদও ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই সুযোগ দেওয়া হলেও মাত্র নয়জন উদ্যোক্তা তাঁদের নতুন শিল্পকারখানা বানানোয় কালোটাকা ব্যবহার করেছেন বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

দেশি কালোটাকার মালিকদের জন্য এটি খারাপ খবর হলেও বিদেশে টাকা পাচারকারীদের জন্য বিরাট সুযোগ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ৭ শতাংশ কর দিয়ে পাচার করা অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে। তাহলে এনবিআরসহ অন্য সরকারি সংস্থা এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবে না। শুধু আয়কর নথিতে উল্লেখ করলেই হবে। এ ছাড়া বিদেশি অর্থ দেশে না আনলে এবং বাড়িঘরসহ স্থাবর সম্পদ দেশে না আনলেও যথাক্রমে ১০ ও ১৫ শতাংশ কর দিলেই চলবে।

এ বিষয়ে আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, যাঁরা এই দেশ থেকে টাকা চুরি করে বিদেশে নিয়ে গেছেন, তাঁরা মূলত দুটি আইন ভঙ্গ করেছেন। প্রথমত এটি তাঁদের অপ্রদর্শিত আয়, যার বিপরীতে কর দেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনও ভাঙা হয়েছে। এই দুটি আইন ভঙ্গকারীদের বিচারের পরিবর্তে পুরস্কৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ