বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:১৯, ৮ আগস্ট ২০২২

ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড বাজার: সোনা যেখানে ‘ছেলের হাতের মোয়া’

ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড বাজার: সোনা যেখানে ‘ছেলের হাতের মোয়া’

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অবস্থিত বিশ্বের প্রথম শপিংমল গ্র্যান্ড বাজার। যেখানে একসময় শপিং করতেন অটোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটরা। বর্তমান যুগেও তুরস্কের অন্যতম বিখ্যাত জায়গা এটি। পুরো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছাদে ঢাকা বাজার ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড বাজার।

বিখ্যাত এই বাজারে বিক্রি হয় পৃথিবীর অভিজাত সব পণ্য। যার মধ্যে সোনা এবং রত্নের অলংকার অন্যতম। বলা হয়ে থাকে, সোনা না কিনে কেউ ফিরতে পারে না গ্র্যান্ড বাজার থেকে। এর বাস্তবতা কিছুটা বোঝা যায়, এখানকার বিকৃত সোনার পরিমাণ দেখলে। প্রতিদিন এখানে আমদানি করা হয় প্রায় দুই টন নিখাঁদ সোনা। আর প্রতিবছর বিক্রি হওয়া স্বর্ণালংকারের পরিমাণ ৩৬০ টন থেকেও বেশি।

গ্র্যান্ড বাজারের একেক জন্য বিক্রিতা দিনে বিক্রি করেন ১০ কেজি থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত সোনা। ২০১৩ সালের হিসেবে অনুযায়ী, যার মূল্য ৫০ হাজার ডলার থেকে দেড় লাখ ডলার পর্যন্ত। বিখ্যাত এই বাজারে প্রায় ৪০০ জন স্বর্ণকার রয়েছে। এছাড়া প্রায় আড়াইশো জন কারিগর কাজ করে এখানে। তুর্কি ভাষায় তাদেরকে ডাকা হয় ‘সাদাকার’।

গ্র্যান্ড বাজাররে দোকানের সংখ্যা প্রায় চার হাজারের বেশি। ৬১টি গলির দুই পাশে সারি সারি দোকানে  লোভনীয় পণ্যের পসরা মেলে বসে আছেন ব্যবসায়ীরা। বাজারটিতে সর্বমোট ২২টি পথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, প্রথম দিকে এখানকার অলংকারের দোকান থেকে স্ত্রীদের জন্য অলংকার কিনতেন অটোমান সাম্রাজ্যের সম্রাটরা। 

পৃথিবীর প্রথম শপিংমল হিসেবে বিখ্যাত ইস্তাম্বুলের গ্র্যান্ড বাজার পর্যটনকেন্দ্রও হিসেবে পরিচিত। ইট পাথরের তৈরি এই শপিংমল দেখতে প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে চার লাখ দর্শনার্থী ভিড় জমান। গ্রীষ্ম এবং বসন্তকালে দর্শনার্থীদের এই সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ লাখেরও বেশি। এত বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও রয়েছে এই গ্র্যান্ড বাজারে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সবসময় টহল দেন এখানে।

বিশ্বের প্রথম এই শপিংমলের আয়তন ৪৪ হাজার বর্গমিটার, যা অনেক ছোটখাটো শহর থেকেও বড়। ১২টি ভবনে কয়েক হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। এসব দেখাশোনার জন্য নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও দায়িত্ব পালন করছে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ৪৩ জন পাহারাদার।

ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত এই বাজার ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের বিস্ময়পুরুষ সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ। পৃথিবীর ইতিহাসে যিনি ‘মেহমেত দ্য কনকোয়ারার’ নামে পরিচিত। তার হাত ধরেই ১৪৫৫ সালে স্থাপিত হয় এই গ্র্যান্ড বাজার। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উন্নতমানের কাপড় এবং অলংকারের জন্য পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এর খ্যাতি, যা টিকে আছে এখন পর্যন্ত।

সুলতান মুহাম্মাদ আল ফাতিহ এই বাজার যখন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তখন দোকান সংখ্যা ছিল মাত্র ১১৮টি। বর্তমানে গ্র্যান্ড বাজারে রয়েছে প্রায় চার হাজারের বেশি দোকান। শতাধিক পেশার লোক কাজ করছেন এখানে। বলা হয়ে থাকে, গ্র্যান্ড বাজারে থাকা পণ্যের মূল্য বিখ্যাত ইহুদী ধনকুবের রসথচাইল্ড পরিবারের সম্পদ থেকেও কয়েক গুণ বেশি।

তবে সম্পত্তির পরিমাণ বিশাল হলেও গ্র্যান্ড বাজারের দোকানগুলোর আয়তন খুবই ছোট। উচ্চতায় ছয় থেকে আট ফুট এবং প্রস্থে ১০ বর্গমিটারের মতো জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে সব দোকানগুলো। এসব দোকানে ঝুলানো থাকে রংবেরঙের কাপড় আর ভেতরে সুরক্ষিত ভল্টে রাখা হয় মূল্যবান বিলাসবহুল পণ্য।

১৬১৮ সালের আগুনে ‘বিত পাজারী’ বা ‘সেকেন্ডহ্যান্ড মার্কেট’ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এমনকি ১৬৬০ সালে পুরো গ্র্যান্ড বাজারই আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। ১৯৫৪ সালে গ্র্যান্ড বাজারে সর্বশেষ আগুন লাগার ঘটনা জানা যায়। বারবার হওয়া অগ্নিকাণ্ডের কারণে এর কাঠের ছাদ পাল্টে টাইলস লাগানো হয়। ইস্তাম্বুলের বিখ্যাত এই গ্র্যান্ড বাজারের ভেতরে ধূমপান করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ