মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ || ৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৯:৪৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ঠেকাতে বলেছেন হাইকোর্ট

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ঠেকাতে বলেছেন হাইকোর্ট

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্তে কমিটি পুনর্গঠন করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ধরনের অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না হয়, এ জন্য পরামর্শ দেবে কমিটি। তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের ঘটনা খতিয়ে দেখবে। একইসাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখবে কমিটি। এ ছাড়া কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যেকোনো বিভাগ, কর্মকর্তার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়। গতকাল বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
শুনানিতে আদালত বলেন, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি-উন্নয়নের জন্য সরকারপ্রধান যেখানে ক্লান্তিহীন কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিশেষ করে ডিজিএম, জিএম, নির্বাহী পরিচালক ও ডেপুটি গভর্নররা ঠগবাজ, প্রতারক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য আর্থিক খাতের এই বিপর্যয়ের জন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত।
দুদক প্রসঙ্গে আদালত বলেন, পি কে হালদারের বিষয়ে আমরা আদেশ দিলাম সেই কবে। আর জানুয়ারিতে এসে দুদক বলল, পি কে হালদার পালিয়ে গেছে। আদালত বলেন, পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়েছেন। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা দুদক কিছুই করতে পারল না।
এ ছাড়া পিপলস লিজিংয়ের ১৪৩ জন (পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি) ঋণখেলাপির মঙ্গলবার আদালতে হাজির হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ৫১ জন হাজির হওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, প্রয়োজনে তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা হবে।
শুনানিতে আদালত বলেন, পিকে হালদার এবং এসকে সুর যেসব কুকর্ম করছে সেটা তো চলবেই। আমরা দেখছি এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি না। আমানতকারীরা আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের। একটি কোম্পানি অবসায়ন করতে হলেও তার একটা প্রসিডিং আছে। আমরা সেটাও দেখছি। একটা পথ বের করার চেষ্টা করছি। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমের প্রসঙ্গ টেনে একপর্যায় আদালত বলেন, শাহ আলম একটা চোর, ডাকাত।
হাইকোর্ট মনে করে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধান চালানো উচিত।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠগবাজ ব্যবসায়ী, প্রতারকরা যাতে জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকবেন। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এদের গোপন আঁতাত, পরিকল্পনা ভেঙে দিতে হবে।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি অর্থের ঋণখেলাপি ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে ঋণ পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়েছিল।
আদালতের সে আদেশের ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৪৩ জন ঋণখেলাপির হাজির হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ৫১ জন হাজির হন। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট বলেন, আদালতের তলবে যারা আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেফতার করে কোর্টে হাজির করা হবে।
আদালতে ঋণখেলাপিদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট গাজী মোস্তাক আহমেদ।
বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে সমন্বিতভাবে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে মতামত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট। আগামীকাল ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আদালতে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।
এছাড়া আদালত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) এ তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে কমিটি পুনর্গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে প্রধান ও উপমহাব্যবস্থাপক সারোয়ার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান, দুই মহাব্যবস্থাপক কবির আহমেদ ও নুরুল আমিন। মঙ্গলবার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব নুরুর রহমানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালত আদেশে বলেছেন, এই তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের সাথে কমিটির কোনো সদস্য জড়িত থাকলে বা কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সেই সদস্য দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকবেন।
এর আগে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) অনিয়ম তদন্ত করতে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
নির্দেশ অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং নামের বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঁচ সদস্যের কমিটির তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেন। পরে আদালত কমিটিতে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব নুরুর রহমান অন্তর্ভুক্ত করে আদেশ দেন। আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম, ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী মোস্তাক আহমেদ, পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক আসাদুজ্জামানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়