সোমবার   ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ || ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৮:১১, ১৯ নভেম্বর ২০২৩

যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বাজারকে ছাড়িয়ে যেতে কাজ করছি: শেখ হাসিনা

যুক্তরাজ্য ও জার্মানির বাজারকে ছাড়িয়ে যেতে কাজ করছি: শেখ হাসিনা
সংগৃহীত

আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ উচ্চ-প্রবৃদ্ধির দেশগুলোর বাজারকে ছাড়িয়ে যেতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, “নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হলে যুক্তরাজ্য এবং জার্মানির মত প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমান উচ্চ-প্রবৃদ্ধির দেশ ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকেও বাংলাদেশ যাতে ছাড়িয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সেই প্রচেষ্টাই আমাদের রয়েছে।”

রোববার রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ফিকি) এর ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠান এবং ইনভেস্টমেন্ট এক্সপো ২০২৩ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে বাণিজ্য ভবিষৎ নিয়ে কথা বলছিলেন শেখ হাসিনা।

সরকারের গত তিন মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিশাল জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে তার প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, "বিগত ১৫ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর একটিতে পরিণত করেছি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

"শক্তিশালী সামষ্টিক অর্থনৈতিক মৌলিক বিষয়সমূহ ও বাণিজ্য সংহতকরণের ফলে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭.২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমাদের মাথাপিছু আয় মাত্র এক দশকে তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২,৭৯৩ মার্কিন ডলারে। জিডিপির আকার ২০০৬ সালের ৪ লাখ কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫০.৩১ লাখ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার প্রায় ৩ গুণ কমে ১৮.৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।"

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকারের ‘বিচক্ষণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অর্থনৈতিক উদারীকরণ এবং বাণিজ্য সংহতকরণের’ ওপর ভিত্তি করে বর্তমানের এই টেকসই অর্থনীতি ও উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ যে ২০২১ সালে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে, সে কথাও শেখ হাসিনা বলেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ২০৩৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৯টি হাই-টেক পার্ক বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। কর মওকুফ, রেমিটেন্স রয়্যালটি, প্রস্থান নীতি, লভ্যাংশ এবং মূলধন সম্পূর্ণ প্রত্যাবর্তন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগ সুরক্ষাসহ বিনিয়োগ নীতিকে আরও সহজ করার জন্য সরকার অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

“আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কাঠামোগত উন্নয়ন কর্মসূচি, বিনিয়োগবান্ধব নীতি, বৃহৎ অভ্যন্তরীণ বাজার অনেক দেশের কাছে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং রপ্তানির জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।“

সরকারের টেকসই অবকাঠামো নির্মাণ তালিকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, নদীর তলদেশে টানেল, গভীর সমুদ্র বন্দর এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ, পদ্মা বহুমুখী সেতু, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, মেট্রোরেল, এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। ২০২৫ সালের মধ্যে কেবল লজিস্টিকস খাতই ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পরিণত হবে বলে তিনির আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "বাংলাদেশে এখন জ্বালানি, পানি, লজিস্টিকস এবং পরিবহন খাতে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অবকাঠামো গড়ার সুযোগ রয়েছে।" ২০৩১ সালের মধ্যে জিডিপিতে বেসরকারি বিনিয়োগের অনুপাত ৩১ দশমিক চার-তিন শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনার কথা জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত ও ধনীক শ্রেণির সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ।

"২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার। কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে।

"এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়েই, বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ মধ্য-আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।”

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি- ফিকি’র যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এ বছর সংগঠনটি ৬০ বছর পূর্ণ করল।

শীর্ষস্থানীয় একটি চেম্বার হিসেবে ‘ফিকি’ বাংলাদেশের ২১টির বেশি খাতে বিশ্বের ৩৫টি দেশের বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে। ছয় দশকের এ যাত্রায় চেম্বারের ২০০টির বেশি সদস্য-প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ রাজস্ব অর্জনে অবদান রেখেছে।

সূত্র: bdnews24.com

সর্বশেষ

জনপ্রিয়