শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৩:৩১, ২৩ মার্চ ২০২৩

চট্টগ্রাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতে জাপানের বিনিয়োগ হাজার কোটি ডলার

চট্টগ্রাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতে জাপানের বিনিয়োগ হাজার কোটি ডলার

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা চলতি সপ্তাহেই দুই দিনের এক সফরে প্রতিবেশী ভারতে এসেছিলেন। সেখানে দেয়া বক্তব্যে এ অঞ্চলে জাপানি কৌশলগত বিনিয়োগের বড় ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কানেক্টিভিটিকে চিহ্নিত করেন তিনি। দুই দেশের কানেক্টিভিটি খাতে এরই মধ্যে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে জাপান।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গত এক দশকে শুধু কানেক্টিভিটি গড়ে তুলতে গিয়েই হাজার কোটি ডলারের বেশি ব্যয় করেছে টোকিও। এর মধ্যে উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নয়নে দেশটির ব্যয় এরই মধ্যে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে জাপানের আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি কার্যক্রমের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। এর প্রধানতম অনুষঙ্গ হলো কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ ও উন্নয়ন। গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণ ও আনুষঙ্গিক উন্নয়ন কার্যক্রমে মোট ব্যয় হচ্ছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান দিচ্ছে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা (১২০ কোটি ডলার প্রায়)। মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জাপানের বিনিয়োগ প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ৪১১ কোটি ডলার)। এছাড়া পরিবহন ও যোগাযোগ খাতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে দেশটি।

সামনের দিনগুলোয় এ ধরনের বিনিয়োগ আরো বাড়বে বলে ভারত সফরকালে ইঙ্গিত দিয়েছেন ফুমিও কিশিদা। সেখানে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিবেষ্টিত উত্তর-পূর্ব ভারতের এখনো অনেক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে, যা কাজে লাগানো হয়নি। বাংলাদেশসহ অঞ্চলটির দক্ষিণের এলাকাগুলোকে একক একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে বিবেচনায় নিচ্ছি আমরা। এখানে বাংলাদেশ ও ভারতের সহযোগিতায় বঙ্গোপসাগর-উত্তর-পূর্ব ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভ্যালু চেইন ধারণার বিকাশ ঘটাতে চাই আমরা, যাতে করে তা গোটা অঞ্চলের প্রবৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শিগগিরই স্বল্পোন্নতের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। সামনের দিনগুলোয় দেশটির সঙ্গে নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে এরই মধ্যে একটি যৌথ সমীক্ষা গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে।’

একই অনুষ্ঠানে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর জনসংযোগবিষয়ক মন্ত্রিসভা সচিব নরিয়ুকি শিকাতা বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশী অর্থনীতির মধ্যে পারস্পরিক কানেক্টিভিটি গড়ে তোলার বিষয়টিতে নজর থাকবে টোকিওর। একই সঙ্গে আরো বেশিসংখ্যক জাপানি কোম্পানি যাতে এ অঞ্চলে বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসে, সে বিষয়ে প্রয়াস চালিয়ে যাবে দেশটি। বর্তমান পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সঙ্গে সহযোগিতার বিষয়টিকে সামনে নিয়ে আসা কঠিন। এ অবস্থায় বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি সইয়ের সুযোগ খুঁজছে জাপান।’

ভারত সফর চলাকালে জাপানি প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে কানেক্টিভিটিতে সামনের দিনগুলোয় জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, ওই অনুষ্ঠানের মূল বিষয়বস্তু ছিল অবাধ ও মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিক (এফওআইপি)। মূলত ইন্দোপ্যাসিফিকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় এ এফওআইপি কৌশল গ্রহণ করেছে বেইজিংয়ের প্রতি বৈরী দেশগুলো। জাপানি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতকে এ কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছেন তিনি। এখন পর্যন্ত চীনের লাগোয়া এ এলাকাটিতেই (বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারত) জাপানের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সামনের দিনগুলোয় তা আরো বাড়ানোর আভাস থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা ইন্দোপ্যাসিফিকে চীনের ক্রমবর্ধমান মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের ওপরেই সবচেয়ে বড় বাজি ধরছে জাপান।

দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক হটস্পটগুলোর অন্যতম এখন উত্তর-পূূর্ব ভারত। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঠিক সংযোগস্থলে অবস্থিত এলাকাটির ভূগঠন অনেকটাই দুর্গম ও জটিল। অতীতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ছিল ‘লুক ইস্ট’ (পুবে দেখ)। এখন এ নীতির আওতা ও পরিধি বেড়ে তা রূপ নিয়েছে ‘অ্যাক্ট ইস্টে’ (পুবে চল)। জাপানের আঞ্চলিক কৌশলের ক্ষেত্রে জাপানও এখন এ নীতির সঙ্গে সংগতি রেখে ভূরাজনৈতিক ও ভূ-অর্থনৈতিক কৌশল গ্রহণ করতে চাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারত ও জাপান মিলে একযোগে ‘অ্যাক্ট ইস্ট ফোরামও’ গড়ে তুলেছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারতের উত্তর-পূর্ব এলাকার সীমান্তের বড় একটি অংশ চীনের সঙ্গে। আঞ্চলিক প্রতিবেশী হিসেবে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারও আছে। উত্তর-পূর্বের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি আসিয়ান ও ভারতকে সংযুক্ত করতে পারে। এ অঞ্চলটা অনেক বড় ধরনের কৌশলগত একটি জায়গাও বটে। তাছাড়া বড় ধরনের বিনিয়োগ পেলে বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে একযোগে চীনের প্রতিযোগী একটি কাঠামো দাঁড় করানো সম্ভব। কিন্তু এখানে বিনিয়োগ ভারতের একার পক্ষে সম্ভব নয়। আবার পশ্চিমারাও করবে না। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগ করবে জাপান। এটা হলে আবার বাংলাদেশও অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। তারা ভারতে উন্নয়ন করতে গেলে আমাদের দরকার। তারা এক ধরনের বৃহৎ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টি দেখছে এবং এ দৃষ্টিভঙ্গিটা কৌশলগত বলেই আমার ধারণা।’

কানেক্টিভিটিসহ বিভিন্ন খাতে জাপানের ঋণ ও অনুদান সহায়তা আসে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) মাধ্যমে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, শুধু উত্তর-পূর্ব ভারতেই সংস্থাটির বিনিয়োগ (২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) প্রায় ২৪ হাজার ৬০০ কোটি ইয়েন। এ বিনিয়োগের মূল লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি ব্যবস্থার উন্নয়ন। মোট পাঁচ ধাপে ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় কানেক্টিভিটি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোয়’ বিনিয়োগ করছে জাইকা। এর আওতায় উত্তর-পূর্ব ভারতে জাতীয় মহাসড়কের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিভিন্ন অংশে মোট ৬৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কপথের উন্নয়ন ও নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

আসামের নয়া ধুবড়ি থেকে মেঘালয়ের ফুলবাড়ী পর্যন্ত নির্মাণ হচ্ছে ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু। ভারতের দীর্ঘতম এ সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাইকা। প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়ন বাংলাদেশ থেকে ভারতের মধ্য দিয়ে ভুটানে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন বাড়াবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

মেঘালয়ের তুরা থেকে ডালু পর্যন্ত মহাসড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। এ রাজ্যেই শিলং থেকে ডাউকি পর্যন্ত বিদ্যমান হাইওয়েকে দুই লেন থেকে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মেঘালয়ের কানেক্টিভিটি তৈরিতে গৃহীত দুটি প্রকল্পই বাস্তবায়ন হচ্ছে জাইকার অর্থায়নে।

আসামের শ্রীরামপুর থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে নির্মাণ ও উন্নয়নকাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পেরও মূল উদ্দেশ্য আসাম ও মেঘালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কানেক্টিভিটি তৈরি।

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বড় একটি ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে কানেক্টিভিটি। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়ার পর থেকেই দুই দেশের কানেক্টিভিটি প্রকল্পগুলোয় গতি এসেছে। এক্ষেত্রে আবার উভয় দেশেরই বড় উন্নয়ন অংশীদার হয়ে উঠেছে জাপান।

জাইকার ভারত দপ্তরের প্রধান সাইতো মিত্সুনারির ওআরএফ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক নিবন্ধে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর থেকে উত্তর দিকে ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্ব ভারতের দিকে কানেক্টিভিটি তৈরির যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের মধ্যকার করিডোরের উন্নয়নে এখন জোর দেয়া হচ্ছে। ত্রিপুরার কৈলাশহর থেকে খোয়াই পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়ন ও নির্মাণের মধ্যে এতে অবদান রাখছে জাইকা। বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আঞ্চলিক বাণিজ্য খুবই সীমিত। জনসাধারণের চলাচল ও পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থসামাজিক খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালেও এ সড়ক দিয়ে বছরে যাতায়াতকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ১৯ লাখ। পণ্য পরিবহন হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ টন। বাস্তবায়ন হলে ২০২৬ সালের মধ্যেই এখান দিয়ে যাত্রী সংখ্যা ৪৭ লাখে পৌঁছবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩৩ লাখ টনে। এছাড়া বাংলাদেশেও রামগড় থেকে বারইয়ারহাট পর্যন্ত সেতু নির্মাণে সহযোগিতা করছে জাইকা। আবার দুই দেশের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ট্রাফিক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে রামগড় থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়ক নির্মাণে সহযোগিতা করছে ভারত।

প্রসঙ্গত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল গড়ে উঠেছে আটটি রাজ্য নিয়ে। এ আট রাজ্যকে ‘সেভেন সিস্টার্স (আসাম, অরুণাচল, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা) অ্যান্ড ওয়ান ব্রাদার (সিকিম)’ নামেও অভিহিত করা হয়। গোটা ভারতে জাতিগত ও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এ অঞ্চলেই। এ আট রাজ্যকে ধরা হয় ভারতের ভূরাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সংবেদনশীল এলাকা হিসেবে। উত্তর-পূর্ব ভারতের আঞ্চলিক সীমান্তের ৯৮ শতাংশই আন্তর্জাতিক, যার মোট পরিমাণ ৫ হাজার ১৮২ কিলোমিটার। এসব সীমানা রয়েছে বাংলাদেশ, চীন, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সঙ্গে। বাকি ২ শতাংশ সীমানা রয়েছে ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে। অঞ্চলটির মোট আয়তন ২ লাখ ৬২ হাজার ২৩০ কিলোমিটার, যা ভারতের মোট আয়তনের প্রায় ৮ শতাংশ। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য থাকলেও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিক থেকে অঞ্চলটি পিছিয়ে। দারিদ্র্যও রয়েছে। সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যার অঞ্চলটিতে জাতিগোষ্ঠী রয়েছে ২২০টি।

জাপান বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে প্রধানত ‘দ্য বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট’ বা বিগ-বি কর্মসূচির আওতায়। কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মতো বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পে এ কর্মসূচির মাধ্যমেই সংযুক্ত হয়েছে জাপান। উদ্যোগটি প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের সময়। ওই সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন প্রয়াত রাজনীতিবিদ শিনজো আবে। সে সময় বাংলাদেশে উন্নয়ন সহায়তা হিসেবে চার-পাঁচ বছরের মধ্যে ৬০ হাজার কোটি ইয়েন (প্রায় ৬০০ কোটি ডলার) বিনিয়োগের ঘোষণা দেন শিনজো আবে।

বর্তমানে বিগ-বির আওতায় করা বিনিয়োগগুলোর বড় একটি অংশ আঞ্চলিক কানেক্টিভিটিকেন্দ্রিক। বিগ-বি সম্পর্কে জাইকার ভাষ্য হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বেল্ট ও অন্যান্য এলাকায় শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি এখানে অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়ন, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি এবং কানেক্টিভিটি বাড়াতেই পরিকল্পনাটি হাতে নেয়া হয়েছে। মূলত তিন স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে আছে বিগ-বি। এর প্রথমটি হলো শিল্প ও বাণিজ্য। এ স্তম্ভের অংশ হিসেবে বর্তমানে কক্সবাজারের মাতারবাড়ী দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হচ্ছে। এতে জাপানের অর্থায়ন ৮০ কোটি ডলারের বেশি। দ্বিতীয় স্তম্ভ হিসেবে দেখা হচ্ছে জ্বালানি খাতকে। এর আওতায় মাতারবাড়ী দ্বীপকে কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের মতো প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ ঘাঁটি হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে। তৃতীয় স্তম্ভ হলো পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।

শিল্প, বাণিজ্য ও জ্বালানি খাতের উৎপাদন বাড়াতে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগকে আরো শক্তিশালী করার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গেও কানেক্টিভিটি বাড়ানো উচিত বলেও বিভিন্ন সময়ে জাইকার কর্মকর্তাদের বক্তব্য ও পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব বিনিয়োগ থেকে মোটা দাগে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার বড় সুযোগ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে মাতারবাড়ী এলাকায় জাপান উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ধরনের কার্যক্রমের একটি বড় উদ্দেশ্য হলো আমাদের এ অঞ্চলকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল হয়ে আসিয়ানের সঙ্গে যুক্ত করা। মূল বিষয়টি হলো ভারত মহাসাগরকেন্দ্রিক কানেক্টিভিটি বাড়ানো। জাপানের এ জায়গায় সাফল্যের সঙ্গে বিনিয়োগ নিয়ে আসতে পারাটা অনেক সহজ, কারণ বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ই জাপানের ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ। আর জাপানের কূটনীতি হলো অর্থনৈতিক কূটনীতি। সাম্প্রতিককালে তাদের কূটনীতিতে রাজনীতি যুক্ত হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য হলো চীনকে মোকাবেলা করা।’

স্বাধীনতার পর থেকেই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী জাপান। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপানের কাছ থেকে ঋণ, অনুদানসহ বিভিন্নভাবে মোট সহায়তা পাওয়া গিয়েছে ২ হাজার ৮৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, পরিবেশ, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং অন্যান্য খাতে বড় অংকের বিনিয়োগ রয়েছে দেশটির।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ