বাংলাদেশের পথরেখায় বিশ্বের দৃষ্টি

গাইবান্ধার আজগর আলী ঢাকা শহরে রিকশা চালান। পাঁচ বছর আগে মাথা গোঁজার কোনো ঘর ছিল না তার। কিন্তু স্বপ্ন ছিল তার একটা ঘর হবে। মনে মনে হয়তো গেয়ে উঠেছিলেন, স্বপ্ন দেখি ছোট একটি ঘর। তার স্বপ্ন সত্যি হয়ে ধরা দিল। নদীভাঙা গ্রামে তার এখন একটি ঘর হয়েছে। তার মনে যেন আনন্দ ধরে না। ঢাকার বুকে রিকশা চালালেও বুকে তার গর্ব- মাথার গোঁজার ঠাঁই হয়েছে।
এভাবে গৃহহীনদের ঘর দেওয়া হয়েছে। সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ ঘর করে দিয়েছেন সরকারপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাদের কোনো ঘর নেই তাদের কী কষ্ট তা তিনি স্বচোখে দেখেছেন। আশ্রয়ন প্রকল্পের সারি সারি এ ঘর দেখে বিদেশি এক অতিথি মন্তব্য করেছিলেন, ‘হাউ বিউটিফুল’! তিনি জেনেছিলেন, এটি বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জন। ইউনিসেফের এক কর্মকর্তা আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো দেখে বলেছিলেন, ‘এটি সরকারের উন্নয়নের নতুন এক মাত্রা।’
উন্নয়নের নতুন নতুন মাত্রা যোগ করেছে বর্তমান সরকার- গ্রাম-শহর সবখানে। নাগরিক জীবনের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা যানজট। এ যানজট কমাতে সরকারের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। তাই দৃশ্যমান হয়ে উঠল ফ্লাইওভার। ফোর লেন, সিক্স লেন। গ্রাম-শহরের দূরত্ব কমাতে নদীর বাঁকে সেতু। অসংখ্য সেতু যোগাযোগ আরও সহজ করেছে।
দক্ষিণাঞ্চল আর ঢাকার মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনতে আর মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে তৈরি হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যে সেতু দেখে বিদেশিরা ভূয়সী প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কারণ সরকারের নিজের টাকা দিয়ে তৈরি এ পদ্মা সেতু এখন সব মানুষের জন্য সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। যে সেতু করার কথা ছিল বিদেশি সহায়তায়, সেই সেতু নির্মাণ হয়ে গেল একেবারে নিজস্ব অর্থায়নে। সারা বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে সরকারের সাফল্যগাথা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
নাগরিক জীবনের আরেক বিস্ময়কর মাইলফলক হচ্ছে মেট্রোরেল। এর মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। এ অবদানের কান্ডারি বর্তমান সরকার। মেগা প্রকল্প হিসেবে সুপরিচিত এ মেট্রোরেল আজ নাগরিক জীবনে এক নতুন প্রাণচাঞ্চল্য এনে দিয়েছে।
সরকারের উন্নয়নের আরেক অনন্য মাত্রা কর্ণফুলী নদীতে বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেলের অন্য প্রান্তে অপেক্ষা করছে যেন মানুষের আরেক নতুন জীবন। উন্নয়ন আর এই নতুন জীবন যেন একই সূত্রে গাঁথা।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য দেশে আজ শতাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠেছে। সেখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প-কলকারখানা। আর এসব শিল্প-কলকারখানায় চাকরির ব্যবস্থা হচ্ছে অসংখ্য বেকার মানুষের। তারাই উন্নয়নের মূল চালিকা শক্তি। এসব উন্নয়ন দেখে বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীসহ বিভিন্ন দেশ একবাক্যে স্বীকার করেছে, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।
গত চার বছরে সরকারের ঝুলিতে একের পর এক যোগ হয়েছে উন্নয়নের সাফল্য। আর সেই সাফল্যে বদলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের ভাগ্য। মাথাপিছু আয় বাড়ছে। আয়ের সঙ্গে কেনাকাটার সামর্থ্য বাড়ছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে সেটি হবে উন্নয়নের এক সোপান। আর এ উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সরকারের রাজস্ব বাড়ছে।
শহর আর নগর জীবনের মানুষের জীবনযাত্রা ক্রমশ পরিবর্তন হচ্ছে। গত চার বছরের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সরকার তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়। আর সেই লক্ষ্য হচ্ছে, সুখী-সমৃদ্ধ একটি সোনার বাংলা, যার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান। সেই স্বপ্নকে সত্যি করে তুলতে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দৈনিক গাইবান্ধা