তেলের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরল জ্বালানি বিভাগ
দেশের বাজারে গতকাল শনিবার থেকে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
এতে বলা হয়, কভিড-১৯ এর প্রকোপ কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। জানুয়ারিতে ডিজেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল ৯৬ দশমিক ৯৫ ডলার ছিল। তা বাড়তে বাড়তে জুন মাসে ১৭০ দশমিক ৭৭ ডলারে ওঠে। জুলাইয়ে কমলেও প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ১৩৯ দশমিক ৪৩ ডলার। প্রতি ব্যারেল ডিজেল যদি ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ ডলারে বিক্রি হয় তবেই বিপিসি ব্রেক ইভেনে থাকে।
অর্থাৎ ৮০ টাকা লিটার দরে দেশের বাজারে বিক্রি করলে লোকসান হয় না। কিন্তু জুলাইয়ের দরেও ডিজেল আমদানি করলে দিনে বিপিসির লোকসান প্রায় ৭৫ কোটি টাকা। অকটেনে লোকসান হচ্ছে দিনে ২ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এভাবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিপিসির লোকসান হয়েছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। গতকালের দাম বাড়ার পর এখন প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ১১৪ টাকায়। জুলাইয়ের দর ধরলে নতুন দামে প্রতি লিটার ডিজেলে বিপিসি ৮ টাকা ১৩ পয়সা লোকসান দিচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বর্তমানে কলকাতায় ডিজেল লিটারপ্রতি ৯২ দশমিক ৭৬ রুপি বা ১১৪ দশমিক শূন্য ৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা বাংলাদেশের আগের দামের চেয়ে (৮০ টাকা লিটার) প্রায় ৩৪.০৯ টাকা বেশি। দাম কম হওয়ায় জ্বালানি তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা বিদ্যমান। পাচার রোধে দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে বেশি দাম হওয়ায় তেল বিক্রি করে বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
জ্বালানি তেলের অর্থায়নের জন্য ২ মাসের আমদানি মূল্যের সমান হিসেবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিপিসির চলতি মূলধন সংস্থান রাখা দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে লোকসানের কারণে বিপিসির সেই সক্ষমতা কমছে। মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত উন্নয়ন প্রকল্প ও বিবিধ খাত থেকে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন করে ভর্তুকিসহ জ্বালানি তেলের দাম ও অন্যান্য বিল পরিশোধ করতে হয়েছে। এখন বিপিসির কাছে সব মিলিয়ে মোট ২২ হাজার কোটি টাকা আছে; যা দিয়ে চলতি মাসের পর আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে না।
গত নভেম্বরে সরকার যখন জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করে তখন ডলার ও টাকার বিনিময় হার ছিল ৮৫ দশমিক ৮৫ টাকা; যা বর্তমানে ৯৩ দশমিক ৫০ টাকায় উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলো ব্যাংক রেটে বিপিসির এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করায় বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কেট রেটে ডলার সংগ্রহের নির্দেশনা দেয়। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেও জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রাখতেও বিপিসির আর্থিক সক্ষমতা বজায় রাখা দরকার। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা না হলে বিপিসি আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলত।
দৈনিক গাইবান্ধা