বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২৪ অক্টোবর ২০২১

স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে বাংলাদেশ

স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে বাংলাদেশ

জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জশুয়া সেটিপা সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার ফাঁকে কথা বলেন সমকালের সঙ্গে। জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংকের উদ্দেশ্য, লক্ষ্য এবং কাজের পরিধির বিষয়ে জানিয়ে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন ও পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেন। জশুয়ার বিবেচনায় স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে। এ কারণেই বাংলাদেশ এখন অগ্রগতির যাত্রায় মধ্যম আয়ের দেশে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ ঘটলেও জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করবে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি রাশেদ মেহেদী।

সমকাল: প্রথমেই জানতে চাই জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক সম্পর্কে।

জশুয়া সেটিপা: এই টেকনোলজি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালে। এর সদর দপ্তর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থিতিশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের একটি গেটওয়ে হিসেবে কাজ করা। বর্তমানে স্বল্পোন্নত দেশ এবং কিছুদিন আগ পর্যন্ত স্বল্পোন্নত দেশ ছিল এমন ৪৬টি দেশে এই ব্যাংক কাজ করছে। এই ব্যাংক বাংলাদেশেও কাজ করছে।

সমকাল: বাংলাদেশে এই টেকনোলজি ব্যাংকের কাজ সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে কি?

জশুয়া সেটিপা: বাংলাদেশে জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক আরও বিস্তৃত পরিসরে কীভাবে কাজ করতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্যই এবারের সফর। সফরে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারক, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী, চিন্তাবিদ, উদ্ভাবক এবং স্টার্টআপদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা জানি, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও প্রায় এক দশক আগে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের একটি রূপরেখা দিয়েছিলেন। সে অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বিস্তৃতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দারুণ সাফল্য অর্জন করেছে। আমি বলব, স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নে বাংলাদেশই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। সরকারি অফিস থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের যাপিত জীবনে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার অভ্যস্ত হয়ে ওঠার বিষয়টি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। এই প্রেক্ষাপটে বলতে পারি, জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংকের কাজ করার জন্য বাংলাদেশ খুবই উপযোগী জায়গা।

সমকাল: জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ঠিক কী কী ধরনের সহায়তা দিতে পারে?

জশুয়া সেটিপা: আপনি জানেন, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের একটা কর্মসূচি এবং অধ্যায় চলছে। জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেই কাজ করছে। কারণ, বর্তমান বাস্তবতায় উন্নতর প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ছাড়া একটি কার্যকর উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আবার তথ্যপ্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করাটাও এ সময়ে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। একেকটা দেশের বাস্তবতা একেক রকম। এক দেশের জন্য যে ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার দরকার, আরেক দেশের জন্য সেটা অন্য ধরনের হতে পারে। সে কারণেই জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক কোন দেশে কী ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বেশি উপযোগী, সেটা সুনির্দিষ্ট করছে। এরপর সহযোগিতা এবং সহায়তার বিষয়টি সেভাবেই নিশ্চিত করা হবে। একইসঙ্গে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে যেন প্রযুক্তিগত বৈষম্য না থাকে, যেমন প্রযুক্তি ব্যবহারে নারী-পুরুষের মধ্যে যেন বৈষম্য না থাকে, শহর ও গ্রামের মধ্যে যেন বৈষম্য না থাকে, সে বিষয়টিও অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সমকাল: আপনারা এসটিআই কর্মসূচির কথা বলছেন। সে বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন কি?

জশুয়া সেটিপা: ঠিকই বলেছেন। আসলে জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংকের মূল কর্মসূচির নামই হচ্ছে এসটিআই বা সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড ইনোভেশন। আপনি জানেন, বিজ্ঞান গবেষণা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের প্রধান বিষয়। এ কারণে স্বল্পোন্নত ৪৬টি দেশে বিজ্ঞান গবেষণা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং প্রযুক্তির উপযোগী ব্যবহার নিশ্চিত করতে নতুন উদ্ভাবনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এখানে বিজ্ঞান গবেষণার বিষয়টিকে বহুমাত্রায় ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সেটা টেলিযোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি, বিশুদ্ধ পানি উৎপাদন ও সরবরাহের প্রযুক্তি নানা রকম হতে পারে। আসলে জীবনের সবক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে। প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় এবং বিস্ময়কর বিবর্তন হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের বহুমাত্রা। তথ্যপ্রযুক্তি এখন সব প্রযুক্তিকেই প্রভাবিত করছে কিংবা বলা যায় অন্য সব প্রযুক্তির ব্যবহারকে সহজ করে দিয়েছে। এ কারণে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয় জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংক।

সমকাল: স্টার্টআপদের কীভাবে সহায়তা করতে পারে টেকনোলজি ব্যাংক?

জশুয়া সেটিপা: টেকনোলজি ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকের মতো নয়। এটি একদিকে যারা তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উদ্ভাবন এবং ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে যাত্রা শুরু করেছেন, সেই স্টার্টআপদের প্রশিক্ষণ দেয়, সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা দেয়। অন্যদিকে, তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহে সহায়তাও দেয়। আবার নতুন উদ্ভাবনে গবেষণার ক্ষেত্রেও সার্বিক সহযোগিতা দেয় এই ব্যাংক। আসলে স্টার্টআপদের সহায়তা হচ্ছে জাতিসংঘ টেকনোলজি ব্যাংকের সহযোগিতা ও সহায়তার প্রধান লক্ষ্যের মধ্যে একটি।

সমকাল: সফরকালে বাংলাদেশকে কেমন দেখলেন?

জশুয়া সেটিপা: দারুণ। হৃদয় থেকে বলছি, বাংলাদেশ আমার কাছে বিপুল সম্ভাবনার দেশ। বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে এই দেশের মানুষের তথ্যপ্রযুক্তি আত্তীকরণের ক্ষমতা খুবই চমৎকার। আমি জেনেছি, এখানে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কাছে স্মার্টফোন পৌঁছে গেছে। ইন্টারনেট ব্যবহার এবং এমএফএস, ই-কমার্সকে সাধারণ মানুষ সাবলীলভাবে ব্যবহার করছে, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। সরকারি সেবার বড় একটা অংশ ডিজিটাল মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এখানে বেশ কয়েকজন স্টার্টআপ উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা চমৎকার উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন। একটা দেশের উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় দরকার উদ্ভাবনী চিন্তার মানুষ, বিশেষ করে তরুণ সমাজ। সেই উদ্ভাবনী চিন্তার অসাধারণ তরুণদের দেখা বাংলাদেশে পেয়েছি। অতএব, বাংলাদেশ সামনে খুব দ্রুতগতিতেই অনেক দূর এগিয়ে যাবে, সন্দেহ নেই।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ