বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নিবেদিতপ্রাণ কর্মী ছিলেন শেখ কামাল
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামাল ছিলেন তারুণ্যের অহংকার; বহু প্রতিভার অধিকারী সৃষ্টিশীল মানুষ। তার সৃজনশীল প্রতিভা আজকের বাংলাদেশের কোটি তরুণের প্রেরণা।
নিরহংকার শেখ কামালের জীবন অধ্যায়ের শুরুর কথা বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে আরও লিখেছেন, ‘একদিন সকালে আমি ও রেণু বিছানায় বসে গল্প করছিলাম। হাচু ও কামাল নিচে খেলছিল। হাচু মাঝে মাঝে খেলা ফেলে আমার কাছে আসে আর ‘আব্বা’ ‘আব্বা’ বলে ডাকে। কামাল চেয়ে থাকে। একসময় কামাল হাচিনাকে বলছে, ‘হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলি।’ আমি আর রেণু দুজনেই শুনলাম। আস্তে আস্তে বিছানা থেকে উঠে যেয়ে ওকে কোলে নিয়ে বললাম, ‘আমি তো তোমারও আব্বা।’ কামাল আমার কাছে আসতে চাইতো না। আজ গলা ধরে পড়ে রইলো। বুঝতে পারলাম, এখন আর ও সহ্য করতে পারছে না। নিজের ছেলেও অনেক দিন না দেখলে ভুলে যায়! আমি যখন জেলে যাই তখন ওর বয়স মাত্র কয়েক মাস। রাজনৈতিক কারণে একজনকে বিনা বিচারে বন্দি করে রাখা আর তার আত্মীয়স্বজন, ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে দূরে রাখা যে কত বড় জঘন্য কাজ তা কে বুঝবে? মানুষ স্বার্থের জন্য অন্ধ হয়ে যায়।
সাহসী শেখ কামাল রাজপথে অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন নিবেদিতপ্রাণ কর্মী হিসেবে ’৬৯-র গণঅভ্যুত্থান এবং মাত্র ২১ বছর বয়সে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। দেশ স্বাধীনের ব্রত নিয়ে তিনি ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঐতিহাসিক ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসভবনে আক্রমণ করার পূর্ব মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে মুক্তিবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
আজ তার ৭২তম জন্মবার্ষিকী, ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট বহুমাত্রিক সৃষ্টিশীল প্রতিভার অধিকারী শেখ কামালের জন্ম গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে মাত্র ২৬ বছর বয়সে জাতির পিতার হত্যাকারী ঘৃণ্য শত্রুদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে শাহাদতবরণ করেন তিনি।
দৈনিক গাইবান্ধা