শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৮:১৩, ২২ জুলাই ২০২১

বঙ্গবন্ধু সেতুতে আরও দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার টোল আদায়

বঙ্গবন্ধু সেতুতে আরও দুই কোটি ৩০ লাখ টাকার টোল আদায়

করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো দিনাজপুরের হিলিতেও দীর্ঘদিন ধরে সব কিন্ডারগার্টেন বন্ধ। এই সময়ে বেতন-ভাতা না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আর্থিক সহযোগিতা পেলেও তারা থেকে গেছেন বাইরে। তাদের পক্ষে সংসার চালানোয় কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে শিক্ষকতা ছেড়ে অনেকেই মুদি দোকানি ও রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন।

হিলিতে মোট ২১টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এগুলোতে শিক্ষক রয়েছেন ৩০০ জনের মতো। স্কুলগুলো করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই বন্ধ। দু-একটি স্কুল অনলাইনে পাঠদানের মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম চালু রেখেছে। ইতোমধ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দিতে না পেরে এবং স্কুলের ভাড়া পরিশোধ করতে না পারে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।

আজিজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ২০২০ সালের ১৬ মার্চ থেকে করোনার কারণে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমরা কোনও জায়গা থেকে অনুদান বা সাহায্য পাইনি। দীর্ঘদিন ধরে বসে থাকতে থাকতে বেতন-ভাতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে আমাদের নিজেদের চলার জন্য পরিবারকে চলার জন্য শিক্ষকতা ছেড়ে রাজমিস্ত্রির পেশা বেছে নিয়েছি।

তিনি বলেন, শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। সে কারণেই এই পেশায় আসা। কিন্তু এখন এমন অবস্থা হবে তা ভাবতে পারিনি। যে হাত দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার জন্য বই-খাতা-কলম ধরেছিলাম, এখন সেই হাত দিয়ে কুর্নি ধরতে হচ্ছে। পেট তো মানে না! তাই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছি।

আজিজুল হক আরও বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করে এখন যা পাই তাই দিয়ে কোনোরকম সংসার চলে যাচ্ছে। এখন কতদিন করোনা থাকবে আর কতদিনে যে স্কুল-কলেজ খুলবে, তার সঠিক খবর নেই। যদি আবারও ভালোভাবে স্কুল খোলে, তাহলে শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যাবো।

মুদি দোকান দিয়েছেন অনেকে
একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন জয় বসাক বর্তমানে মুদি দোকানি। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন যে স্কুলে চাকরি করতাম সেটা বন্ধ রয়েছে। একে তো স্কুল বন্ধ, যে কারণে বেতন-ভাতাও বন্ধ। তাই বর্তমানে করুণ অবস্থার মধ্যে রয়েছি। যে অবস্থা তাতে এই মুহূর্তে স্কুল খোলার কোনও সম্ভাবনাও নেই। ভবিষ্যতে কী হবে তা জানি না।

তিনি আরও বলেন, আমরা খুব শোচনীয় অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছি। এই অবস্থায় শিক্ষকতা বাদ দিয়ে নতুন পেশাকে বেছে নিতে হয়েছে। এখন একটি মুদি দোকান দিয়েছি। এখান থেকে যা আয় হচ্ছে তাই দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছি।

 ডাঙ্গাপাড়া মডেল স্কুলের সহকারী শিক্ষক আঙ্গুর বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি আগে বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতাম। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ তাই বর্তমানে বসেই আছি। এখন আর কী করবো? পরিবার তো চালাতে হবে? স্কুল খোলা থাকলে মাস শেষে যে টাকা পেতাম তাই দিয়ে নিজে যেমন চলতে পারতাম, সংসারেও কিছু করতে পারতাম। এখন সেটা আর হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এখন হাতের কাজ করছি। এগুলো বিক্রি করে যা আয় হচ্ছে তাই দিয়ে চলছি।

বাধ্য হয়ে এখন হাতের কাজ করছেন শিক্ষিকারা

 একই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা সূচনা ইসলাম বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানটি ছোট পরিবারের মতো শুরু করি। আমরা নয় জন শিক্ষক-শিক্ষিকা মিলে স্কুলটি চালানো শুরু করি। তখন বেশ ভালোই চলছিলো। কিন্তু এই করোনা এসে গোটা বিশ্ব যেমন থমকে দিয়েছে, তেমনি আমাদেরকেও থমকে দিয়েছে। আমি আমার স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছি না। তারা এতদিন বসে থেকে কী করবে? আমি তো সামান্য সহযোগিতাও করতে পারছি না! তাই তারা বাধ্য হয়ে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত হয়েছেন যে যেভাবে পারছেন, তাদের সংসার চালিয়ে নিচ্ছেন।

 তিনি আরও বলেন, এতদিন হয়ে গেলো কোনো কিছু্ই পাচ্ছি না। আমাদেরকে তা সরকার সাধারণ জনগণ হিসেবেও মূল্যায়ন করতে পারে। সেটাও করছে না। সাধারণ জনগণ এ পর্যন্ত কাছে কিছু না কিছু অনুদান পেয়েছে। কিন্তু আমরা যারা বেসরকারি স্কুলে চাকরি করি, তারা কিছুই পাচ্ছি না।

ডাঙ্গাপাড়া চাইল্ড কেয়ারের প্রধান শিক্ষক শাহিন হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কিন্ডারগার্টেনগুলো প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা যে অবস্থানে রয়েছি, তা বর্ণনা করার মতো না। অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, শিক্ষক-কর্মচারী যারা রয়েছেন, তারা অনেকে অনেক ধরনের পথ বেছে নিয়েছেন। কেউ কেউ সংসার জীবনে চলে গেছে কেউ কেউ জীবিকা নির্বাহের জন্য যা যা করা দরকার, সেই পথ বেছে নিয়েছেন তারা। বেঁচে থাকাটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনাকালীন বিভিন্ন পেশাভিত্তিক লোকজনের আয়ের প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। আমাদের বেশকিছু কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক জীবিকা নির্বাহের জন্য শিক্ষকতা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় গিয়েছেন। তাদের যদি কোনও সমস্যা হয়, যদি তারা আর্থিক দিক দিয়ে কোনও সমস্যায় পড়েন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে যে আর্থিক সহায়তা আমাদের কাছে আছে, আমরা সেটা অবশ্যই তাদের কাছে পৌঁছে দেবো। 

তিনি আরও বলেন, যদি তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন বা প্রয়োজন মনে করেন, তাদের তথ্য নিয়ে প্রয়োজনীয় সহায়তা করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। ইতোপূর্বে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সহায়তা করা হয়েছে। এবারও যদি শিক্ষকদের এমন প্রয়োজন পড়ে আমরা অবশ্যই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবো।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ