রাজশাহীতে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
দেশে উৎপাদন করা পেঁয়াজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর অস্বাভাবিক ভাবে দাম বাড়ে পেঁয়াজের। ভারত থেকে আমদানি করে মেটাতে হয় পেঁয়াজের চাহিদা। তারপরও পেঁয়াজের দাম বাজারে থাকে আকাশছোঁয়া। পেঁয়াজ আমদানি করতে গিয়ে ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। তাই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে চাচ্ছে কৃষি বিভাগ।
পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালিন চাষ। মৌসুমে শুধু রাজশাহীতেই ৫৩৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বীজতলা তৈরি করা। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপন করেছেন। আগামী জানুয়ারিতে বাজারে পাওয়া যাবে এই পেঁয়াজ।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, গ্রীষ্মকালীন এই পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে ৫৩৮ হেক্টর জমিতে। ইতিমধ্যে এই পেঁয়াজ চাষে ৩ হাজার কৃষককে দেওয়া হয়েছে প্রণোদনা। এর মধ্যে এই পেঁয়াজের বীজ, সার, বীজতলা করার পলিথিনসহ অন্য উপকরণ চাষিদের বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থ বছরে ১৮ হাজার ৫৬৩ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছিল। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৮ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। অথচ রাজশাহী জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
এই পেঁয়াজ সবচেয়ে বেশি চাষ হচ্ছে দুর্গাপুর উপজেলায়। সেখানে ৭৯ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। আর সবচেয়ে কম চাষ হচ্ছে তানোর উপজেলায়। এই উপজেলায় ২০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে।
গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজচাষিরা বলছেন, খুব অল্প খরচে ভালো ফলন পাওয়া যাচ্ছে। কৃষি বিভাগও এখন গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষের বিশেষ প্রণোদনা দিচ্ছে। দ্রুত ফলন দেওয়ায় চাষিরা এখন এই পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকছেন।
চারঘাট উপজেলা শিবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে মাঠের পর মাঠজুড়ে পেঁয়াজের চারা রোপনে চাষিদের দম ফেলার সময় নেই। সারিবদ্ধভাবে পেঁয়াজ রোপন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
পিয়াস নামের এক শিক্ষার্থী জানান, স্কুলের পাশাপাশি পেঁয়াজ লাগানোর কাজ করছি। পেঁয়াজ লাগিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে চারশ টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এই টাকা দিয়ে বই খাতা খরচ ও সেই সাথে পরিবারের কিছু সাহায্য করতে পারছি।
শিবপুর গ্রামের কৃষক রাসেল বলেন, গতবছর আমি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম। কিন্তু পেঁয়াজের দাম না পেলেও এ বছরে পেঁয়াজের অনেক দাম থাকায় এবারে ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগাচ্ছি।
উপজেলার মাঠে- মাঠে সবাই দল বেধে লাইন করে সকাল থেকে বিকেল অব্দি। সবাই একসাথে পেঁয়াজের জমিতে বসে পেঁয়াজের চারা রোপন করছেন। এবার পেঁয়াজের দাম ভালো হওয়ায় জেলা জুড়ে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্য সব ফসলের পাশাপাশি পেঁয়াজ চাষের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন চাষীরা।
বাঘা উপজেলার দুর্গম পদ্মার চরে রোপন করা খায়েরহাট এলাকার কৃষক আবদুস সালাম পেঁয়াজের জমি দেখছিলেন। এ সময় পেঁয়াজ চাষি আবদুস সালাম জানান, চলতি মৌসুমে পদ্মার পানি আগে নেমে যাওয়ায় পেঁয়াজ আগাম রোপন করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজের বাজারমূল্য ভালো পাবেন বলে আশা করছেন। পদ্মার চরে তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন।
চকরাজাপুর চরের পেঁয়াজ চাষি গোলাম মোস্তফা জানান, এবার পদ্মার পানি আগে নেমে যাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে আগাম পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। গত বছর তিন বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে বাজারমূল্য ভাল পেয়েছিলেন। এবারও আশানুরুপ দাম পাবেন বলে জানান।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান জানান, এ বছর উপজেলায় সর্বত্রই কমবেশি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। উপজেলার সমতল এলাকার চেয়ে বেশি পরিমাণ পেঁয়াজ উৎপন্ন হয় পদ্মার চরে। তবে পেঁয়াজ চাষিদের সব সময় পরামর্শ দেওয়া হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন জানান, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানিনির্ভরতা কমানোর জন্য গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দেওয়া হচ্ছে। রাজশাহীতে এই পেঁয়াজ চাষের আগ্রহ বাড়ছে। এতে প্রত্যাশার চেয়েও ভালে ফলাফল পাওয়া গেছে। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে।
সূত্র: আমার রাজশাহী