শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শখের বশে কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী নাঈম

শখের বশে কোয়েল পাখি পালনে স্বাবলম্বী নাঈম

শখের বসত কোয়েল পাখি পালন করতে গিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে কোয়েল পাখির খামার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এক যুবক। তার খামারে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার ডিম আসে সেখান থেকে প্রতিমাসে ডিম বিক্রি করে আয় করছেন প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। খামারীর সফলতা দেখে কোয়েল পাখি পালনে আগ্রহী হচ্ছে এলাকার যুবকরা। পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহরের ০৯ নং ওয়ার্ডের যুবক মাহবুবুল আলম নাঈম, ২০১৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পড়াশুনা শেষ হলে বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করেন। চাকরির সুবাদে উত্তর অঞ্চলে বিভিন্ন জায়গার কৃষি ও খামার পরিদর্শন করতে গিয়ে শখ করে ৩শ‘ কোয়েলের বাচ্চা সংগ্রহ করে গড়ে তুলেন খামার। লাভ ভালো হওয়ায় পরবর্তীতে ১ হাজার কোয়েল দিয়ে বানিজ্যিক ভাবে শুরু করেন কোয়েল পাখির ব্যবসা। খামার দেয়ার পরে ঠান্ডার কারণে তার বেশ কিছু পাখি মারা যায়। এরপরও হাল ছাড়েননি নাঈম। অবশেষে খামার দেওয়ার ১বছরে কোয়েলের ডিম বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন এই উদ্যোক্তা। পাখির ডিম ও পাখি বিক্রি করে বেশি লাভে রয়েছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশেই নুরজাহান লাইভ স্টক হ্যাচারি এন্ড ফার্ম নামে তার খামারে তিনটি টিনসেড ঘর রয়েছে। 

সেখানে প্রায় ৬ হাজার কোয়েল পাখি রয়েছে। তিনি ও তার পরিবারের লোকজন এগুলোর দেখাশুনা করছেন। এছাড়াও আরো ৩ জন কর্মচারী রয়েছে খামার পরিচালনার জন্য। যার ফলে তাদেরও তৈরি হয়েছে একটি আয়ের উৎস। প্রতিনিয়ত এ খামার থেকে সংগ্রহ হচ্ছে সাড়ে ৩ হাজার ডিম। প্রতি পিস ডিম পাইকারী বিক্রি করছেন ৩ টাকা দরে। শুধু কোয়েল পাখিই নয় এর পাশাপাশি নাঈম পালন করছেন কিছু সংখ্যক সোনালী, লেয়ার ও টারকি মুরগি। খামারটি পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত থাকে। মালিক কে পেয়ে খাবার আশায় ছোটাছুটি করে পাখিগুলো। এছাড়াও খুচরা বিক্রি করার জন্য রয়েছে তার খামারের সামনে নিজস্ব দোকান। যেখানে কোয়েল পাখির ডিম, কোয়েল পাখি, বয়লার মুরগি ও গবাদি পশুর খাবার সহ ঔষধ বিক্রি করা হয়। খরচ বাদে এতে তার মাসে আয় হচ্ছে আড়াই লাখ টাকা।

সফল কোয়েল খামারী মাহবুবুল আলম নাঈম জাানান, ২০১৭ সালে কোয়েল পালন শুরু করেছিলাম। ডিমের চাহিদা এবং মাংসের চাহিদা বেশি থাকায় পরিবারের সহায়তায় পরবর্তীতে বানিজ্যিক ভাবে কোয়েল খামার গড়ে তুলি। এই খামারে প্রতিদিন পাখির জন্য চার বেলায় ১০০ কেজির মতো খাবার দেয়া লাগে। দিনে ২ বার ও রাতে ২ বার করে মোট ৪ বার স্টাটার ফিড ও কোয়েল ফিড দেই।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে আমার খামারে থাকা সাড়ে ৩ হাজার কোয়েল পাখিই ডিম দেয়। বেশ ভালোই লাভবান হচ্ছি। অনেকেই আমার খামার ঘুরে দেখছে এবং আমি অনেক যুবককে কোয়েল খামার গড়ে তোলার পরামর্শ দিচ্ছি। আমার দেখাদেখি অনেক শিক্ষার্থীরা নিজেদের উদ্যোগে পড়াশোনার পাশাপাশি স্বল্পপরিসরে কোয়েল পাখি পালন শুরু করেছে।

ফার্মের কর্মচারী মো. রায়হান হোসেন জানান, আমি দীর্ঘদিন ঢাকায় চাকরি করেছি এরপরে নাঈম ভাইয়ের এখানে চাকরি নিয়েছি। তার ফার্ম থাকার কারণে আমার চাকরির সুযোগ হয়েছে। কোয়েল পাখির পালনে অনেক লাভবান হওয়া যায় কারন কোয়েল পাখিতে রোগ বালাই কম হয়।

মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস কলেজের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী নতুন উদ্যোক্তা মোঃ রাহাত খান জানান, নাঈম ভাইয়ের খামার থেকে ৫০ টি কোয়েল পাখি নিয়ে একটি খামার শুরু করেছি। ইতিমধ্যে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ টি ডিম আমি বিক্রি করছি স্থানীয় বাজারে। আর আমার এই খামার পরিচালনার জন্য সকল পরামর্শ ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন নাঈম ভাই।

স্থানীয় বাসিন্দা নেছার আহমেদ জানান, আমাদের কলাপাড়ার গর্ব নাঈম ভাই। সে একজন সফল কোয়েল খামারী। আমরা তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পেয়ে থাকি। তার কাছ থেকে ১শ কোয়েল পাখির বাচ্চা সংগ্রহ করেছি। আশা করছি আমিও সফল হতে পারব।

কলাপাড়া পৌর শহরের দারুল ইহসান মডেল মাদ্রাসার শিক্ষক রাসেল মাহমুদ জানান, নাঈম ভাই আমার প্রতিবেশী আমি অনেক বছর ধরেই দেখছি এই খামার করে তিনি লাভবান হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকার মানুষজন এখান থেকে কোয়েল পাখির ডিম কিনে নিয়ে যান। আমিও এখান থেকে ডিম কিনে নিয়ে খাই। আপনারা যে কেউ চাইলে এই কোয়েল পাখির খামার করতে পারেন এটা লাভজনক একটি খামার।লালন পালনে তেমন বেশি কষ্ট নেই।

কলাপাড়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. জোনায়েদ খান লেলিন জানান, প্রোটিন, ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিংক, ফলেট, ভিটামিন-এ,ই,ডি ও কোলস্টেরল সমৃদ্ধ কোয়েল পাখির ডিম। তাই মানবদেহের এসব চাহিদা পূরনে কোয়েল পাখি ডিম অপরিহার্য। আমরা বিশেষ করে অপুষ্টিকর শিশুদের বেশি বেশি কোয়েল পাখির ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেই।

পটুয়াখালী জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ডাক্তার সঞ্জীব কুমার বিশ্বাস জানান, মাহাবুবুল আলম নাঈম কোয়েল পাখির পালন করে সফল হয়েছেন। তার ফার্মে প্রথমে ৩০০ টি দিয়ে শুরু করেছিল এখন তার ফার্মে প্রায় ৬০০০ মতো কোয়েল পাখি রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন হাজারের মতো ডিম উৎপাদন হয় তার খামারে। বিদেশ ফেরত অথবা যুবক-যুবতী যারা এই কোয়েল পাখির খামার দিতে চায় তাদের জন্য আমাদের প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হবে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু