শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:১৯, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

ননী ফলের নানা গুণ, আবাদ হচ্ছে টাঙ্গাইলে 

ননী ফলের নানা গুণ, আবাদ হচ্ছে টাঙ্গাইলে 

টাঙ্গাইলে বাণিজ্যিকভাবে আবাদ শুরু হয়েছে ননী ফল গাছের। বিভিন্ন রোগের প্রতিরোধক এ ফল গাছ চাষ করে প্রশংসা পাচ্ছেন বাবুল হোসেন নামের ইউনানি হাকিম। তিনি জানিয়েছেন, মানব দেহের অশোক সারাতে বিবিধ গুণ রয়েছে এই ফলের।

বাবুলের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় হলেও গত ১৭ বছর ধরে তিনি টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌর এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি বিগত ২০০৬ সালে বগুড়ার হামদার্দ ইউনানি মেডিকেল কলেজ থেকে এক বছরের একটি কোর্স করেন। পরে কালিহাতীর এলেঙ্গায় এসে আয়ুর্বেদিক হাকিম হিসেবে ইউনানি ওষুধের দোকান করেন। ওই পেশায় থাকায় তিনি এই ঔষধি বাগান করার আগ্রহ করেন। পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে তিনি এই বাগান করেছেন। এ বছর তার বাগানে ঠিকমতো ফল এলে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা করছেন। গাছ ছোট থাকায় এখন ফল কম এলেও আগামীতে এক গাছেই সাত-আট কেজি ফল আসবে এমনই প্রত্যাশা করছেন তিনি।

‘ননী ফলের’ বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘মরিন্ডাসিট্রিফলিয়া’। এটি একটি আফ্রিকান ফল। এছাড়াও এই গাছটি ক্রান্তীয় অঞ্চলে অর্থাৎ ভারত উপমহাদেশে জন্মায়। বাবুল হোসেন এলেঙ্গার পৌলী এলাকায় এ গাছ রোপণ করেছেন। তার রোপণ গাছের মধ্যে এ বছর ৭০টি গাছে ফল ধরেছে।

জানা যায়, এই ননী ফল গাছে বারো মাস ফল পাওয়া যায়। বর্তমানে এ ফল বাজারে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা কেজি বিক্রি হয়ে থাকে। এর চারাও বিক্রি হয় চারশ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। ননী গাছের ফল ও পাতা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির এক মহৌষধ। যদিও এখন পর্যন্ত অনেকের কাছেই এ ফলটি অপরিচিত। তবে বর্তমানে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ও ওষুধ নির্মাণকারী সংস্থা ‘ননী ফলের’ জুস বোতল ভর্তি করে বাজারজাত করছেন। এই ফল ব্লান্ট করে খাওয়া যায়। ননী ফল হাড়ের সমস্যায়, ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যায়, শারীরিক ও মানসিক দুই ধরনের ক্লান্তি কমাতে, স্ক্যাল্পের যেকোনো ইরিটেশন যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি, এমনকি খুশকির মতো সমস্যা, ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায়, বডি ইমিউনিটি বাড়াতে, মানসিক স্ট্রেস কমাতে, সর্দি, কাশি, জ্বর সমস্যায়, স্কিনের ময়েশ্চারকে ঠিক রাখতে ও স্কিনের বয়সকে ধরে রাখতে কাজ করে থাকে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার পৌলী এলাকায় দুই বছর আগে এক বিঘা জায়গা নিয়ে সিলেট থেকে ৭০টি চারা কিনে বাগান তৈরি শুরু করেন বাবুল। এর পর মালয়েশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বীজ এনে করেছেন প্রায় চার হাজার চারা। তিনি তার পুরো জায়গা টিন দিয়ে বেড়া তৈরি করেছেন। তার প্রস্তুতকৃত জায়গার একপাশে ননী গাছের নার্সারি তৈরি করেছেন। বাকি অংশে ছয় ফুট দূরত্ব রেখে গাছ রোপণ করেছেন। ছোট-বড় মিলিয়ে তার কাছে ৩০০টি গাছ আছে। অনেকেই কৌতূহল নিয়ে তার এই ঔষধি বাগান দেখতে আসে। দেখতে এসে গাছের চারা ও ফল কিনে নিয়ে যায়। অনেকে বাড়ির ছাদ ও বারান্দার টবে লাগানোর প্রক্রিয়া করছেন।

বাগান দেখতে আসা আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি এই ফলের নাম আগে কখনো শুনিনি। নেট জগত থেকে জানতে পারি এই ফল ও গাছের পাতা গ্যাস্ট্রিক ও চর্ম রোগের কাজ করে। তাই আগ্রহ নিয়ে বাবুলের বাগান দেখতে এসেছি। যাওয়ার সময় একটা গাছ ও কিছু ফল কিনে নিয়ে যাবো।

মীর আসাদুজ্জামান বলেন, আমি পাশের এলাকা থেকে এসেছি। আমি এই ফল সম্পর্কে শুনেছি, তাই দেখতে এলাম। টাঙ্গাইলের অন্য কোথাও এই ফল গাছের খোঁজ পাইনি। এই ফল অ্যালার্জি ও হাড়ের জয়েন্টের ব্যথায় খুব উপকারী। তাই ওনার বাগানে এসেছি ননী ফল নিয়ে যেতে। খেয়ে যদি উপকার পাই তাহলে আবার আসব।

ননী গাছ আবাদকারী বাবুল হোসেন বলেন, আমি এই ইউনানী পেশায় থাকার কারণে আমার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল একটি ভেষজ বাগান করার। সেই কারণে আমি সিলেট থেকে ৭০টি ননী ফলের চারা কিনে আনি। এরপর মালয়েশিয়া ও আফ্রিকা থেকে বীজ আনি। সেখান থেকেই আমার বাগান এ পর্যন্ত এনেছি। এই ফল সম্পর্কে মানুষ খুব একটা জানে না। তাই টাঙ্গাইলে তেমন বিক্রি হয় না। লোকমুখে শুনে কিছু লোকজন আসে। এই ফলের অনেক গুণ থাকায় এ এলাকাসহ আশপাশের এলাকা থেকে অনেকেই দেখতে আসে আমার বাগান। আমি মনে করি, এই ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে মানুষ জানতে পারলে প্রচুর চাহিদা বাড়বে। আমার বাগানে ননীফল ছাড়াও ব্লাক জিংজার (কালো আদা), জাবালেম জিংসিং, ইনসুলিং প্লান্ট, তালমুল অশগন্ধা, সর্পবন্ধা, ঘৃতঃকুমারী, অর্থ শিপন, চুইঝাল, হস্তিকর্স পলাশ, দাদমর্দন, তুলশি ও পাথরকুচির চারা রয়েছে।

টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আহসানুল বাশার জানান, এ ব্যাপারে বাবুল হোসেন নামের এক কৃষক আমাদের একজন ভালো উদ্যোক্তা। তার আবাদ করা ননী ফল গাছে এবার ফল ধরেছে। এই ফল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এ ফল ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে। পুরাতন বাতের ব্যাথা সারাতে এই গাছের ফল ও পাতা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ভেষজ গাছ কমে যাচ্ছে। আমাদের দেহের জন্য ভেষজ গাছ লাগানো দরকার। তাই ভেজষ উদ্ভিদে বাবুল হোসেনের মতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে এসেছেন। আর বাবুল হোসেনের মতো আরো অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হোক। কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ