শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৫ নভেম্বর ২০২২

মৌলভীবাজারে চা বাগানে কফি চাষ

মৌলভীবাজারে চা বাগানে কফি চাষ

ব্রিটিশরা এক সময় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের জাগছড়াসহ বিভিন্ন চা বাগানে কফি চাষ করতেন। তারা চলে যাওয়ার পর ধীরে ধীরে কফির চাষ কমে যায়। তবে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম রপ্তানি পণ্যের তালিকায় রয়েছে কফি। তাই মৌলভীবাজারে পুনরায় কফি চাষাবাদের জন্য কৃষি বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন উপজেলায় চারা বিতরণ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে জেলার পাহাড়ি ও সমতল ভূমিতে কফির দুটি জাত- “অ্যারাবিকা” ও “রোবাস্তা” পরীক্ষামূলক চাষে ভালো ফলন হয়েছে। ফলে চায়ের পাশাপাশি এ অঞ্চলে কফি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি গবেষকেরা।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সামছুদ্দিন আহমদ বলেছেন, “মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলা, রাজনগর, কুলাউড়া ও শ্রীমঙ্গলে বিভিন্ন পাহাড়ি ও সমতলে পরীক্ষামূলকভাবে প্রায় তিন হাজার কফির চারা রোপণ করা হয়। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো প্রকল্প না থাকায় এটির ব্যাপকহারে বিস্তার সম্ভব হয়নি।”

তিনি বলেন, “মৌলভীবাজারে কফির দুটি জাতেরই ফলন ভালো হয়েছে। এর মধ্যে রোবাস্তা সমতলে ভালো হয়েছে; আর পাহাড়ে হয়েছে অ্যারাবিকা। একটি কফি গাছ তিন বছর থেকে ফল দেওয়া শুরু করলেও ৫/৬ বছর হলে ফলের পরিমাণ অনেক বেশি হয়।”

সরকারি প্রণোদনাসহ প্রকল্প আকারে কফির চাষ করলে এ অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে; পাশাপাশি রপ্তানি করে সরকারও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে বলে জানান এ কৃষি অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা।

মৌলভীবাজারে অনেকেই সখের বসেও কফির চারা রোপণ করছেন। কফির ফলগুলো দেখতে অনেকটা চেরি ফলের মত হয়।

রাজনগর উপজেলার টেংরা বাজার ইউনিয়নে ম্যাথিউরা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে- রাস্তা ও বাড়ির পাশে কফি গাছে থোকা থোকা কফি ধরে আছে।

কফির স্বাদ ও ঘ্রাণ গ্রাহকের কাপ পর্যন্ত রাখতে হলে সঠিকভাবে কফি গ্রাইন্ডিং করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কফি বীজ গুড়া করা যত মিহি হবে তত দ্রুত সুন্দর কফি তৈরি হবে। কিন্তু স্থানীয়রা এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে পারেন না; তারা পাকা কফি গাছ থেকে পেড়ে রোদে শুকিয়ে ও ভেজে গুড়া করে তারপর পান করেন।

ম্যাথিউরা বাগানের বাসিন্দা সৈয়দা মনি জানান, তিনি লালচে হয়ে যাওয়া কফির বীজগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রথমে পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নেন। তারপর লম্বা সময় পানিতে ভিজিয়ে রাখেন। একটু নরম হওয়ার পর এর উপরের চামড়া ছাড়িয়ে নেন। পরে রোদে শুকাতে দেন।

ভালো করে শুকানোর পর আরেক দফা এর শক্ত খোলস ছাড়িয়ে চুলায় ভেজে নেন। ভাজার সময় এটি হালকা কালচে রঙ হলে ব্লেন্ডারে গুড়ো করে গরম পানিতে চিনি মিশিয়ে পান করেন।

শ্রীমঙ্গলের পরিবেশবীদ ৭৫ বছর বয়সী সিতেশ রঞ্জন দেব বলেন, “এ উপজেলার জাগছরা ও সোনাছড়া চা বাগানে ফিনলে কোম্পানির বিশাল কফি বাগান আর কফির ফ্যাক্টরি ছিল। চা উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় কফি চাষ কমে যায়। ১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে ফিনলে কফি চাষ বন্ধ করে সেখানে চা আবাদ বর্ধিত করে।”

ফিনলে টি-এর শ্রীমঙ্গলের ভাড়াউড়া ডিভিশনের ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, “সোনাছড়া ও জাগছড়ায় আমাদের বিশাল কফি বাগান ছিল। লাভ কম হওয়ায় প্রায় ৩৭/৩৮ বছর আগে কোম্পানি কফি চাষ বন্ধ করে দেয়।”

রাজনগরে বিভিন্ন চা বাগান ও গ্রামীণ এলাকায় বেশ কিছু কফি গাছের চারা লাগানো হয়েছে; যার মধ্যে রোবাস্তা জাতের কফিই বেশি বলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেজাউল করিম জানান। তিনি বলেন, “বেশ কিছু কফি গাছের বয়স তিন বছর অতিক্রম করেছে এবং এই গাছগুলোতে ফলনও ভালো হয়েছে।”

চায়ের পাশাপাশি এ জেলায় কফি চাষের একটা উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক ও কৃষি গবেষক লুৎফুল বারী বলেন, “কফি হৃদরোগ ও পাকস্থলীর জন্য ও বেশ উপকারী। কফি একটি উচ্চ মূল্যের ফল। চায়ের সঙ্গেও এটি চাষ করা যেতে পারে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র চাষিরা তাদের বাড়িতেও চাষ করতে পারেন। তবে এর জন্য জেলায় একটি প্রসেসিং সেন্টার প্রয়োজন হবে।”

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু