মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ || ৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৩:০০, ৮ নভেম্বর ২০২২

সোহেলের নতুন চমক বিদেশি মালবেরি

সোহেলের নতুন চমক বিদেশি মালবেরি

নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করার পর চাকরির পেছনে না ঘুরে যিনি কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে ইতিমধ্যেই তিনি এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছেন। মেধা, বুদ্ধিমত্তা আর শ্রম দিয়ে তিনি বরেন্দ্রর বুকে গড়ে তুলেছেন ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্ক’ নামে একটি দৃষ্টি নন্দন কৃষি খামার। তার এই সৃষ্টিশীলতা আর সাফল্য দেখার জন্য প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিজিট করছেন কৃষি ফার্মে। কেউ আসছেন দেখার জন্য আবার কেউ আসছেন পরামর্শ গ্রহণ করার জন্য। সোহেলের কৃষি ফার্মে রয়েছে প্রায় শতাধিক ধরনের দেশি-বিদেশি ফলের গাছ। সেসব গাছে শোভা পাচ্ছে নানা জাতের চেনা-অচেনা ফলমূল। ইতোমধ্যে সোহেলের ফার্মে উৎপাদিত বানানা ম্যাংগো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে

বিদেশে রপ্তানি হয়েছে। কৃষি উদ্যোক্তা সোহেলের সৃষ্টিশীলতায় এবার যোগ হয়েছে বিদেশি মালবেরি ফল। উচ্চ পুষ্টিসম্পন্ন এই মালবেরি ফলটি বর্তমানে থোকায় থোকায় শোভা পাচ্ছে উদ্যোক্তা সোহেলের ফার্মে; যা এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন ভিড় করছেন মানুষ। সরেজমিন উদ্যোক্তা সোহেলের ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, গাছে গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ, লাল এবং কালো লম্বাটে মালবেরি ফল। গাছের পাতা ডিম্বাকার, খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সূচাল। আকারে আঙুর ফলের চেয়ে কিছুটা বড় এই ফল। সোহেল জানান, মালবেরি ফল সারা বছরই পাওয়া যায়। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে গাছে ফুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকে। ফল প্রথম অবস্থায় সবুজ পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রঙ ধারণ করে। মালবেরি ফল দেখতে খুবই

সুন্দর ও আকর্ষণীয়। পাকা ফল রসালো এবং টক-মিষ্টি। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি ফল সংগ্রহ করা যায়। এই গাছের চারা সহজেই তৈরি করা যায়। বাসা বাড়ির ছাদেও এই ফল চাষ করা সম্ভব। আলাপচারিতায় উদ্যোক্তা সোহেল আরও জানান, গ্রামাঞ্চলে এ ফলের পরিচিতি ও কদর না থাকলেও শহরাঞ্চলে এই মালবেরি ফলের বেশ চাহিদা রয়েছে। বড় শহরের শপিংমলগুলোতে মালবেরি ফল ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রয় হয়ে থাকে। শহরাঞ্চলে মালবেরি ফলের চাহিদা দেখে তিনি এই ফল চাষে আগ্রহী হন এবং দুই বছর আগে বিভিন্ন দেশের ৮টি জাতের গাছ সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলকভাবে ফার্মে লাগান। তিনি জানান, মালবেরি চাষে রোগবালাই কম হওয়ায় গাছে তেমন

কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়না। জৈব সার ব্যবহার করেই সারা বছর পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল চাষ করা সম্ভব। ফলের উৎপাদন খরচ কম এবং বাজারে চাহিদা ও দাম বেশি হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি চাষের সম্ভাবনার কথা জানান এই উদ্যোক্তা। বর্তমানে ফার্মে ১০টি মালবেরি গাছ রয়েছে। এ বছর ১ বিঘা জমিতে মালবেরি গাছ লাগানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। বাণিজ্যিকভাবে মালবেরি ফল চাষের কথা জানিয়ে এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, এরই মধ্যে চারটি জাত পছন্দ করেছি। চারা তৈরি করে এক বিঘা জমিতে মালবেরি চাষ করবো। আমার উৎপাদিত বিদেশি এই ফল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দেখতে ও পরামর্শ গ্রহণ করতে আসছেন। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের

উপ-পরিচালক ইতোমধ্যে মালবেরি বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করতে উৎসাহিত করেছেন। এই ফল চাষের মাধ্যমে দেশের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলেও তিনি মত দেন। নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক শামছুল ওয়াদুদ জানান, সোহেল রানা একজন সফল বাগানি। দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন ফল, ফুল, আমসহ নানা ধরনের বাগান করে সফলতা পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ৮ জাতের মালবেরি গাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছেন। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলার উপযোগী হয়েছে। প্রতিটি গাছে থেকে প্রায় ৮-১০ কেজির মতো ফল পাওয়া যাবে। এলাকার মাটিও মালবেরি চাষের উপযোগী। নওগাঁতে মালবেরি চাষ প্রসারে চাষিদের প্রশিক্ষণ প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়