মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪ || ৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ৮ নভেম্বর ২০২২

টাঙ্গাইলের লাল মাটিতে কফি চাষ

টাঙ্গাইলের লাল মাটিতে কফি চাষ

টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর গড়ের লাল মাটিতে কফি চাষ শুরু হয়েছে। মধুপুর গড় এলাকার মাটি উচু ও লাল থাকায় দেখা দিয়েছে কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনা। 

মধুপুর গড় অঞ্চলে রয়েছে ইতিহাস খ্যাত শালবন। শালবনের এ এলাকায় প্রচুর কৃষি ফসল জন্মে থাকে। লাল মাটিতে আনারস, কলা, আদা, কচু, হলুদ, পেপে, লেবু, ড্রাগন, মাল্টা, পেয়ারাসহ নানা কৃষি ফসলের পাশাপাশি সম্প্রতি কৃষি বিভাগ স্থানীয় সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের অনুপ্রেরণা ও সহযোগীতায় কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকরা কফি চাষ শুরু করেছে।
 
মধুপুর গড় অঞ্চলের মাটি, ভু-প্রকৃতি, আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতা শক্তি ভাল থাকার কারণে কফি চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে বলে কৃষি বিভাগ ধারণা করেছে। আর এই কফি চাষ করে এবার বঙ্গবন্ধু কৃষি স্বর্ণপদক পেয়েছেন স্থানীয় চাষি ছানোয়ার হোসেন। 

মধুপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কাজু বাদাম এবং কফি গবেষণা উন্নয়ণ ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২১-২২ অর্থ বছরে কৃষকদের মাধ্যমে মধুপুরে ১১ হেক্টর জমিতে কফি চাষ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত ৫৩ জন কৃষকের মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার কফির চারা বিতরণ করা হয়েছে।

পৃথিবীতে ৬০ প্রজাতির কফি থাকলেও বাণিজ্যিকভাবে দুই রকমের কফি চাষ রয়েছে। এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এরাবিকা ও রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। চাষ উপযোগী আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকুল থাকায় ভাল উন্নতমানের এবং ঘ্রাণের কফি চাষ সম্প্রসারণের জন্য পাহাড়ী এলাকায় বিশেষ কার্যক্রম এ প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান। 

রোবাস্টা জাতের কফি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় খুব উপযোগী। যে কারণে পার্বত্য অঞ্চল ও টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়ের আবহাওয়ায় এর সম্প্রসারণ সম্ভব। মাটি ও আবহাওয়া কফি চাষের জন্য যথেষ্ট উপযোগী বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে।

জানা যায়, মধুপুরের লাল মাটিতে গড়ে উঠা প্রথম কফি বাগান। মধুপুর শহর থেকে ১০ কি.মি. দুরে মহিষমারা গ্রামে ছানোয়ার নামে এক কৃষক প্রথমে ব্যক্তি উদ্যোগে কফি চাষ শুরু করেন।

কৃষক ছানোয়ার জানান, চাকরি ছেড়ে ৫ বছর আগে শখের বশে কফি চাষ শুরু করেন। রাঙ্গামটি জেলার রায়খালী থেকে ২০০ চারা সংগ্রহ করেন তিনি। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার মহিষমারা গ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলে গড়ে তোলেন স্বপ্নের কফি বাগান। তার দাবি মধুপুরে তিনিই প্রথম কফি চাষ শুরু করেন। প্রায় ২ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন কফির বাগান। রয়েছে ৫-৬’শ পরিপক্ক গাছ। প্রতিটি গাছে ঝোকায় ঝোকায় কফি ঝুলছে। চোখ জুড়ানো কফির ছড়াগুলো। যেন এক খন্ড কফির রাজ্য। 

ছানোয়ার হোসেন মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে। সিলেটে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে তিনি গ্রামে এসে কৃষি কাজে ঝুঁকে পড়েন। 

বাগানের কফির চারাগুলো দেখতে কিছুটা দেবদারুর চারার মত। প্রতিটি গাছে লতিয়ে রয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ কফির ফল। যেন সবুজের মধ্যে কফির গুটিগুলো দারুন দেখাচ্ছে। কৃষিতে এ ফসল যেন এক নতুন অতিথি। কফির পাকা গুটিগুলো দেখতে টক টকে লাল ও কোন কোনটা কাঁচা হলুদের মতো। কাঁচাগুলো সবুজ। বাগানের মধ্যে কফি গাছ ছাড়াও অন্যান্য কিছু গাছও রয়েছে। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি পরিপক্ক গাছে ফুল ধরা শুরু হয়।

মে থেকে জুন মাসের মধ্যে ফুল থেকে গুটিতে পরিণত হয়। আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে গুটিগুলো পরিপক্কতা লাভ করে। পরে এই গুটিগুলো রোদে শুকিয়ে নিতে হয়। বাজারজাত ও কফি পান করার জন্য উপযোগী করতে মেশিনের মাধ্যমে গুড়া পাউডারের মতো করে নিতে হয়। আবার কফির বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা যায় বলেও জানা যায়।

ফলন ভাল ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে হেক্টর প্রতি ৭৫০ থেকে ১০০০ কেজি এবং গাছ প্রতি বছরে ১ কেজি কফি পাওয়া সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। স্থানীয়ভাবে কফির দাম নির্ধারিত না থাকলেও স্থানীয় চাষি ছানোয়ার হোসেন গ্রিন কফি ১৫’শ ও প্রসেসিং করা কফি ২৫’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে এমনটাই জানা গেছে। 

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়