শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ৮ আগস্ট ২০২২

সখীপুরে হলুদ চাষে কৃষকের দিনকাল

সখীপুরে হলুদ চাষে কৃষকের দিনকাল

সখীপুর উপজেলার কাকড়াজান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকদের কাছে যুগ যুগ ধরে হলুদ চাষ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রসিদ্ধ। হলুদ চাষ করে কৃষকরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। হলুদ রোপনের পর হলুদ গাছের পরিচর্যা, বাজারজাতকরণ ও বিক্রির মাধ্যমে আর্থিক লাভবান হওয়ার পর কৃষকের মুখে আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে । লোক মুখে হলুদ লক্ষী মসলা নামেও ব্যাপক সুপরিচিত। তাছাড়া হলুদ প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক হিসেবেও অনেকে ব্যবহার করে থাকেন। হলুদ মানব শরীরের জন্য উপকারী। হলুদের রয়েছে ভিটামিন আইরন, কপার, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন বি ৬, এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিভাইরাস, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিফাঙ্গাল।  

হলুদ মানবদেহের পাকস্থলীর হজম ক্ষমতা উন্নতিকরণ, ত্বক পরিচর্যা , রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং প্রদাহজনিত বিভিন্ন জটিল সমস্যার উপশম করতে সাহায্য করে। তাছাড়া দেশীয় সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানেও হলুদের ব্যবহার সুপরিচিত । তন্মধ্যে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বিবাহ অনুষ্ঠানে ‘বর-কনেকে’ হলুদ দিয়ে তেলাই (গোসল) করানো হয়। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু তরকারি রান্নার জন্য হলুদ ব্যবহার করা হয়। 

সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা যুগ যুগ ধরে হলুদ চাষের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে । হলুদ চাষের সাথেই জড়িয়ে রয়েছে হলুদ চাষীদের জীবনের সকল সুখ দুঃখ। তন্মধ্যে কাকড়াজান ইউনিয়নের জিতাশ্বরী, মহানন্দপুর, দেবলচালা, নয়ারচালা, গড়বাড়ী, তৈলাধারা, হারিঙ্গাচালা, বাশারচালা, বাঘেরবাড়ী, দিঘীরচালা, বৈলারপুর, মরিচকুরিচালা, সাপিয়াচালা, হামিদপুর, ইন্দারজানী, খুংগাইরচালা, ভাতগড়া আদানি, বামনচালা, ভুয়াইদ গ্রামের কৃষকদের মধ্যে হলুদ চাষের প্রবণতা উপজেলার অন্যান্য গ্রামের কৃষকদের চেয়ে তুলনামূলক বেশী পরিমাণ । এছাড়াও উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের হতেয়া রাজাবাড়ি গ্রামে, কামালিয়াচালা গ্রামে ও রতনপুর কাশেমবাজার এলাকার বিভিন্ন এলাকায় কৃষকরা হলুদ রোপন করে চাষাবাদ করে। 

বর্তমানে কৃষকরা হলুদ ক্ষেতে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রয়োজনমত হলুদ ক্ষেতের উন্নত ফলন পাওয়া এবং হলুদ গাছের সুরক্ষার জন্য বৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতিও অবলম্বন করতে পারে। শুধু তাই নয় পাশাপাশি হলুদের ভালো ফলন পাওয়ার জন্য কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে হলুদ ক্ষেতে প্রয়োজনমতো পরিচর্যা করতে পারে । এতে করে হলুদ চাষীরা ভালো ফলন পায় এবং অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হতে পারে। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পূর্বে অতীত দিনগুলোতে কৃষকদের হলুদ চাষাবাদে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হলুদ চাষীরা প্রযুক্তির উন্নীতকরণ হওয়ায় এবং হলুদ চাষের জন্য ভালো বীজের সহজলভ্যতা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ পাওয়া, সময় মতো হলুদ ক্ষেতে সার প্রয়োগ করা, হাতের নাগালে বাজারজাত করণের সুবিধা এসকল প্রেক্ষাপটে তুলনামূলক হলুদ চাষীদের অতীতদিনগুলোর চেয়ে বর্তমানে হলুদ চাষে বেশ সুবিধা তৈরী হয়েছে। হলুদ পাইকারী বেচাকেনা হয় জিতাশ্বরী বাজার, দিঘীরচালা বাজার, বড়চওনা বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায়। কৃষকদের কাছ থেকে ওই বাজারগুলো থেকে পাইকারি দরে হলুদের ব্যবসায়ীরা হলুদ ক্রয় করে।

নয়ারচালা গ্রামের হলুদ চাষী মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, নিজস্ব ৮০ শতাংশ ০৫ মণ হলুদ রোপন করেছিলাম। গত বছর হলুদ ক্ষেতের পরিচর্যার পর প্রায় ৯০ মণের মতো হলুদ পেয়েছি। কিছু হলুদ নিজেদের খাওয়ার জন্য রেখে বাকী হলুদ বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। এ বছরও হলুদ রোপন করেছি। এ বছরও হলুদের ভালো ফলন পাবো বলে আশা করছি। 

মহানন্দপুর গ্রামের কৃষক মোঃ মোবারক হোসেন বলেন, সাংসারিক অন্যান্য কৃষি কাজের পাশাপাশি বছর হলুদ রোপন করি। আমার নিজের ১৭ শতাংশ জমিতে ০৩ মণ হলুদ রোপন করেছিলাম। প্রায় ২৪ মণের মতো হলুদ পেয়েছি। নিজেদের খাওয়ার জন্য কিছু হলুূদ বাড়ীতে রেখে বাকী হলুদ বাজারে বিক্রি করে আমি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছি। 

গড়বাড়ী গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা হলুদ চাষী নাঈমুল ইসলাম বলেন, আমাদের নিজস্ব ৪০  শতাংশ জমিতে দীর্ঘদিন ধরে হলুদ চাষ করে আসছি। আমার বাবা আগে হলুদ চাষাবাদ করত। গত ০৩ বছর ধরে আমি হলুদ চাষাবাদ করছি। পরিবারের সকলেই হলুদ চাষাবাদের উপর নির্ভরশীল। জমিতে গত বছরের বৈশাখ মাসে  ০৫ মণ হলুদের বিছুন রোপন করার পর হলুদ চাষাবাদ বাবদ বিশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছিল। দীর্ঘ ১০ মাস হলুদ ক্ষেতের পরিচর্যার পর গেল ফাল্গুন মাসে হলুদ ক্ষেত থেকে প্রায় ৫০ মণের মতো হলুদ পেয়েছি। স্থানীয় বাজারে কাঁচা হলুদ পাইকারী দরে ১১০০ টাকা মণ বিক্রি করে । এ বছরও পুনরায় জমিতে হলুদ রোপন করেছি।

হাতীবান্ধা ইউনিয়নের কামালিয়াচালা গ্রামের বাসীন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র সরকার বলেন, গ্রামের বাড়ীতে আমার নিজস্ব ০৫ শতাংশ জমিতে হলুদ চাষ করেছি। ব্যবসায়িক চিন্তা চেতনায় হলুদ চাষাবাদ না করলেও অল্প জমিতে হালচাষ করেও আমি হলুদের ভালো ফলন পেয়েছি। সারাবছর আমার বাজার থেকে হলুদ কিনে খেতে হয় না। আমার পরিবারের সদস্যদের হলুদের চাহিদা আমার নিজস্ব হলুদ খেত থেকেই পূরণ হয়। তবে ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক চিন্তা চেতনায় বড় পরিসরে হলুদ চাষাবাদের পরিকল্পনা রয়েছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হলুদ চাষীরা ৩৯০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষাবাদ করছে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নিয়ন্তা বর্মন বলেন, সখীপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের হলুদ চাষীরা ৩৯০ হেক্টর জমিতে হলুদ চাষ করছে। বিভিন্ন কৃষি প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নত জাতের হলুদের প্রদর্শনী এবং হলুদ চাষীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা হলুদ চাষাবাদে ভালো অবদান রাখতে পারবে। পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও কৃষকরা স্বচ্ছলতা অর্জন করবে।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু