শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১২:৫৩, ২১ নভেম্বর ২০২০

ইউএনও’র মানবিক উদ্যোগ, ঘর পাচ্ছেন বিধবা

ইউএনও’র মানবিক উদ্যোগ, ঘর পাচ্ছেন বিধবা

‘স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। ভাইদের দয়ায় একমাত্র মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে বাবার ভিটায় দিন কাটাচ্ছিলাম। আমি মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করে খাই। কিন্তু ভেঙে-চুরে মাটির সাথে নুইয়ে পড়া বাড়িটা ঠিক করার সামর্থ আমার নেই। এবারের বর্ষায় অনেক কষ্ট পেয়েছি। প্রতিবেশীদের পরামর্শে ইউএনও স্যারের কাছে গেলাম। আমার সব কথা শুনে নিতে স্যার ইশ্বরের দূত হয়ে আমাকে ঘর করে দিলেন নিজ খরচে। এখন সেখানে একটু শান্তিতে থাকতে পারব। যারা আমাকে শান্তিতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, ঠাকুর তাদেরও শান্তিতে রাখবেন।’

চট্টগ্রামের হাটহাজারী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বিধবা দীপু রানি দাশ তার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমীনের ব্যক্তিগত অর্থায়নে নির্মিত ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন এ কথাগুলো। বলতে বলতেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন তিনি।

বিধবা দীপু রানি দাশের বয়স প্রায় ৫০ বছর। স্বামী জীবন কৃষ্ণ দাশ মারা গেছেন অনেকদিন আগে। একমাত্র ছেলেটা মানসিক প্রতিবন্ধী, একা একা রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়ায়। সংসার বলতে তিনি আর মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে, এই দুজনই। বাসাবাড়িতে কাজ করে জীবন চলে দীপু রানির। ভাইদের জায়গায় পলিথিন দিয়ে ঘেরা দেয়া জরাজীর্ণ একটা ঘর করে বসবাস করতেন। পলিথিন দিয়ে ঘেরা সেই ঘরটিও এক সময় বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়লে আশ্রয় নেন ভাই লিটন দাশের বাড়িতে। কিছুদিন আগে প্রতিবেশীদের পরামর্শে দীপু রানি হাজির হন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীনের অফিসে।

সব কথা শুনে ইউএনও সরেজমিনে দীপু রানির এলাকায় গিয়ে তার মানবেতর জীবন যাপনের চিত্র দেখতে পান। যেটিকে দীপু রানি ঘর বলছেন, সেটি ভেঙে-চুরে অনেক আগেই মাটিতে শুয়ে গেছে। লাঠি দিয়ে চালাটা কোনোভাবে ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হয়েছে, পাশে পলিথিনের ঘের, বর্ষায় ঘরের ভেতরটা পুরোপুরি কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। সব দেখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন সিদ্ধান্ত নেন, নিজ খরচে দীপু রানিকে ঘর করে দেবেন। এসময় সহযোগিতার হাত বাড়ান আরও দুই ব্যক্তি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, ‘একদিন এক নারী এসে আমাকে জানালেন তার থাকার জায়গা নেই। জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমার কাছে কেন এলেন?’ উত্তরে তিনি জানান, মানুষ তাকে বলেছে, ‘ইউএনও স্যারের কাছে যাও।’ সরেজমিনে গিয়ে দেখলাম, তার ঘরের টিনের চাল মাটির সঙ্গে লেপ্টে আছে। প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে কোনোভাবে ঢেকে-ঢুকে রাখা হয়েছে। তবে বর্ষার বৃষ্টি প্রতিরোধ করার মত নয়। তখন ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাকে একটা ঘর করে দেয়া হয়েছে। আগামী রোববার (২২ নভেম্বর) সেই ঘরে উঠবেন দীপু রানি। ভালোবাসার এই উপহারের নাম দিয়েছি ‘শান্ত নীড়’।

তিনি বলেন, ‘বাড়ি তৈরিতে জমি নিয়ে একটু সমস্যা ছিলো। কারণ ওই বিধবার নিজের কোনো জমি নেই। পরে ভাইদের বুঝিয়ে তাদের জমিতে ঘরটি তৈরি করে দেয়া হয়েছে। বিধবা যতদিন ইচ্ছে বাড়িতে থাকতে পারবেন ছেলেকে নিয়ে, তবে জমির মালিক থাকবেন ভাইয়েরা। বাড়ি তৈরিতে আমাদের মোট এক লাখ ১৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এলাকার দুই হৃদয়বান ব্যক্তি বাড়ি তৈরিতে ৩৫ হাজার টাকা দিয়েছেন, বাকিটা নিজ খরচে সম্পন্ন করেছি।’

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ