যেদিকে চোখ যায়, শুধুই মরিচ
জামালপুরের সরিষাবাড়ির আওনা ইউপির বৃলপাল চরের কৃষক মুকুল মিয়া জমি থেকে বাড়ির পাশে বালু চরে মরিচ শুকানোর জন্য ডেরা তুলেছেন। তার মতো ডেরা তুলেছেন আরো অনেকেই। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, গুণগতমানের জন্য জামালপুরের মরিচ সারা দেশে ব্যাপক চাহিদা। এই মরিচ উৎপাদন হয় সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের জেগে ওঠা চরে ও বিভিন্ন উপজেলায়। এবছর ৮ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে।
গত বছর চাষ হয়েছিল ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। গতবারের চেয়ে এ বছর ৬৪০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ বেশি হয়েছে। এবার প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে কাঁচা অবস্থায় ২৫ থেকে ৩০ মণ করে মরিচের ফলন হচ্ছে। শুকানোর পর বিঘাপ্রতি ফলন টিকবে ৯ থেকে ১০ মণ। খেত থেকে তুলেই প্রতিমণ মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খেতে সার, বীজ ও হালসহ বিঘাপ্রতি একজন কৃষকের খরচ হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। একজন কৃষকের বর্তমান দরে মরিচ বিক্রি করে প্রায় ১০ হাজার টাকা বিঘায় লাভ হচ্ছে। অন্যদিকে শুকনা মরিচ মণপ্রতি বিক্রি করে পাচ্ছেন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলান্দহ উপজেলার মধ্যের চর এলাকার মাঠ জুড়ে শুধু মরিচ আর মরিচ। যেদিকে চোখ যায়, শুধুই মরিচ। কৃষক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মাঠ থেকে মরিচ ওঠাতে ব্যস্ত। চাষিরা খেত থেকে কাঁচা ও পাকা মরিচ উঠিয়ে আলাদা আলাদা বস্তায় ভরছেন। অনেকেই আবার খেতে পাইকারদের কাছে মরিচ বিক্রি করছেন। কেউ কেউ পাকা মরিচ শুকানোর জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।
চাষি মামুন জানান, গত বছর যে মরিচ মাত্র ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন, সেই মরিচ এবার বাজারে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে বিঘায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
চাষি নজর আলী মন্ডল বলেন, এবার খেতে অনেক মরিচ হয়েছে। বাজারে দামও অনেক ভালো। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষ করেছি। মরিচ বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হওয়ার আশা করছি।
সরিষাবাড়ির চর ছাতারিয়ার তোতা মিয়া জানান, চরাঞ্চলের জমিতে প্রতি বছরই বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। এতে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়। সঠিক সময়ে জমিতে চাষ করে মাটি শুকিয়ে নেয়া জমিতে ফলন ভালো হয়। কুলপাল চরের মরিচ চাষিরা জানান, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর ফলন বেশি হয়েছে। তারা জমি থেকে পাকা মরিচ তোলেন। বাজারে দামি বেশি থাকায় দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন।
জামালপুর সদর উপজেলার কৃষক নজরুল জানান, সবাই অন্য ফসল করে শীতের কারণে মার খেয়েছে। আমার মরিচের গাছ তেমন ক্ষতি হয়নি। দুই বার কাঁচা মরিচ তুলে বিক্রি করেছি। যা খরচ হয়েছিলো সবই উঠে গেছে। এখন যে পরিমাণ পাকা মরিচ খেতে আছে তাতে দ্বিগুণ লাভ হবে।
জামালপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের, উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলায় এবার মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। শীতের শুরুর দিকে কুয়াশার কারণে কিছু মরিচ খেতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে কৃষকের কোনো ক্ষতি হয়নি। বাজারে মরিচের ভালো দাম থাকায় কৃষক এবার অনেক লাভবান হবে।
দৈনিক গাইবান্ধা