শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১২:৩০, ১১ আগস্ট ২০২০

বাংলাদেশের নারী কর্মকর্তাদের ভূয়সী প্রশংসা

বাংলাদেশের নারী কর্মকর্তাদের ভূয়সী প্রশংসা

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে দক্ষিণ সুদানের বাংলাদেশের নারী কর্মকর্তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। যুদ্ধপীড়িত নারী ও শিশুদের সমস্যা সমাধানে সম্প্রীতি বন্ধন তৈরি করে যাচ্ছেন। এই কার্যক্রমে জাতিসংঘ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তারা বাংলাদেশের সুনাম আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ফলে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সুনাম আরও বেড়ে গেছে।

দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে জানানো হয়েছে, বিশে^র যুদ্ধপীড়িত দেশগুলোতে শান্তিস্থাপনের বৈশি^ক প্রচেষ্টার সমন্বিত উদ্যোগের অংশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সুনাম অনেক আগে থেকেই রয়েছে। এবার যোগ হয়েছে, বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের নাম। তারা দেশটিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন কাজে অধিকতর অংশগ্রহণ করে দেশটিতে সম্প্রতির নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। দক্ষিণ সুদানের বাহার-আল-গাজাল এলাকায় বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-৩ (ব্যানব্যাট-৩) এর সঙ্গে নিয়োজিত নারী শান্তিরক্ষীগণ তাদের পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যুদ্ধপীড়িত নারী ও শিশুদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।

সূত্র জানিয়েছে, কন্টিজেন্ট কমান্ডারের নিবিড় তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নারী শান্তিরক্ষীদের এ দলে রয়েছেন মেডিক্যাল অফিসার লেঃ কর্নেল মাসুমা তাসনিম, নারী শান্তিরক্ষীদের কমান্ডার মেজর আফরোজা এবং লজিস্টিক অফিসার মেজর তাজরিনসহ ১৬ জন নারী সদস্য কাজ করছেন। দক্ষিণ সুদানে মোতায়েনের আগে ইউনিট এবং বিপসটের (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং) নিবিড় তত্ত্বাবধানে দক্ষতা উন্নয়ন ও শান্তিরক্ষা মিশন সংশ্লিষ্ট নানামুখী উন্নততর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তারা। নারী দলটিকে দায়িত্ব পালনের জন্য পরিপূর্ণভাবে উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে মিশন এলাকায় আগমনের পর হতে তারা শান্তিরক্ষী বাহিনীর বিভিন্ন অপারেশন কার্যক্রমের পাশাপাশি যুদ্ধপীড়িত জনগণকে সহায়তাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে যে অবদান রেখেছেন তা ইতোমধ্যেই দক্ষিণ সুদানের জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত সদর দফতর, সেক্টর সদর দফতর ও ফিল্ড অফিসসহ সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণ বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদের শুধুমাত্র সাদরেই গ্রহণ করেননি বরং বাংলাদেশী এই নারী দলের কার্যক্রমকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। তারা নিজেদের নারী জনগোষ্ঠীকে সচেতন করে তুলছেন। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে দক্ষিণ সুদানের নারীরা কাজ করছেন। এ বছর ২৯ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে দক্ষিণ সুদানের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রধান, এসআরএসজি ডেভিট শেহরার পশ্চিমাঞ্চলে সংঘর্ষ ও সংঘাত অবসানে ব্যানব্যাট ৩’র সফলতা উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের নারী শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে নারী শান্তিরক্ষীগণ যুদ্ধপীড়িত নারীদের সমস্যা অনুধাবন এবং সমাধানে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের সাফল্যের বিষয়টি বিবেচনা করে তিনি বাংলাদেশসহ সকল শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহকে অধিকসংখ্যক নারী শান্তিরক্ষী পাঠানোর আহ্বান জানান।

শান্তিরক্ষা মিশনে নারী সৈনিকগণ তাদের পুরুষ সহকর্মীদের পাশাপাশি সকল দায়িত্ব যেমন অস্থায়ী ক্যাম্প পরিচালনা, সীমানা নিরাপত্তা এবং নিরাপত্তা টহলসহ সকল ধরনের অপারেশনাল কর্মকা-ে অংশ নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন যুদ্ধের ভয়াবহতা ও নির্মমতা নব্য প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ সুদানের আপামর জনগণের জীবনের প্রাণোচ্ছলতাকে ম্লান করে দিয়েছিল। তারা বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদের কাছে পেয়ে প্রাণখুলে তাদের সুখ দুঃখের কথা বলতে পারছেন। যা সম্ভবত পুরুষ শান্তিরক্ষীদের জন্য অত্যন্ত কঠিন হতো। নারী শান্তিরক্ষীগণ আগ্রহভরে তাদের সমস্যাদি শুনে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। পরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

আনমিস ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীগণ স্থানীয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে কুষ্ঠরোগী নিরাময় কেন্দ্রের অবহেলিত রোগীদের সহায়তার জন্য গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কাজ শুরু করেছেন। ক্রিসমাস উদ্যাপন এবং মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সহায়তার আয়োজনও করেছেন নারী শান্তিরক্ষীরা। ব্যানব্যাট-৩ কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীগণের সঙ্গে উল্লেখিত কেন্দ্রের রোগীগণ নেচে গেয়ে দিনটি আনন্দে কাটিয়েছেন। বাংলাদেশী নারী সেনাসদস্যগণ রোগীদের খোঁজখবর এবং মতবিনিময়ের পাশাপাশি চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। মৃতপ্রায় কেন্দ্রটিতে নতুন প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে। আনমিস ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মাজেট ভিওলা নামক একজন নারী কুষ্ঠরোগীর অভিমত, কুষ্ঠরোগী হিসাবে পরিবার এবং গ্রাম আমাদের ত্যাগ করেছিল। সবাই আমাদের ভুলেই গিয়েছিল, আমাদের দুর্দশার অন্ত ছিল না। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে দেবদূতের মতো হাজির হলো। এখন আমরা সুস্থ জীবনযাপন করছি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চীফ অব জেনারেল স্টাফ সম্প্রতিক তার দক্ষিণ সুদানের পরিদর্শনের সময় বিষয়টি সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করেন। বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীগণের প্রদর্শিত দক্ষতা এবং অর্জিত সুনামের প্রশংসা করেন। বিভিন্ন সময়ে আনমিস (টঘগওঝঝ)’র এসআরএসজি, ফোর্স কমান্ডার এবং ডেপুটি ফোর্স কমান্ডারসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণও তাদের পরিদর্শনের সময় বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদের তৎপরতা আনমিস মিডিয়া যেমন ওয়েবসাইট, ফেসবুক, বেতার এবং সংবাদপত্র ইত্যাদিতে নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষা মিশন সূত্র জানিয়েছে, ক্যাথলিক রেডিও নেটওয়ার্ক এ মাজক নামক স্থানে বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদের সহায়তায় গবাদি পশু চিকিৎসা বিষয়ক প্রকাশিত সংবাদে চিকিৎসা গ্রহণকারী একজন স্থানীয় নারী পশুপালককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, আমি এতদিন জানতাম না কেন আমাদের অসংখ্য গবাদি পশু মারা যায়। আজ আমাদের চক্ষু উন্মোচিত হয়েছে, আমরা ব্যানব্যাটের নারীদের নিকট থেকে যে ওষুধ এবং পরামর্শ পেয়েছি সেগুলো আমাদের জন্য অবশ্যই সহায়ক হচ্ছে। নারীদের সমতা নিয়ে আন্দোলনরত স্থানীয় নারী নেতৃগণ বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীদের কর্মকা-ে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওয়াও আইনসভার ডেপুটি স্পীকার ও স্থানীয় নারী নেত্রী মিস আলেং ভিওলার নেতত্বাধীন নারী সংগঠনসমূহ বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষী দলের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সহযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তারা বাংলাদেশী নারীদের সৈনিক পেশার এমত এমন কঠিন পেশায় দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি দক্ষিণ সুদানের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে দায়িত্ব পালনে অর্জিত সফলতা দেখে উদ্বুদ্ধ হন। তারা স্থানীয় নারীদের বাংলাদেশী নারীদের পাদাঙ্ক অনুসরণ করে দক্ষিণ সুদানের সেনাবাহিনীতে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করেন। মিস ভিওলা বলেন, পরিবার-পরিজন রেখে একজন নারী কিভাবে সম্মুখসারিতে যুদ্ধরত থাকতে পারেন সেটা আমার কাছে কল্পনার অতীত ছিল। বাংলাদেশী নারীদের সংস্পর্শে এসে আমি অভিভূত হয়েছি। দক্ষিণ সুদানের সামর্থ্যবান নারীদের আমরা সেনাবাহিনীতে যোগদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করব। নারী-পুরুষের সমতা আনয়নের নৈতিক অবস্থানের পাশাপাশি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নারীদের ক্রমবর্ধমানহারে সম্পৃক্তকরণের জাতিসংঘ ও বৈশি^ক প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো বাংলাদেশ ব্যাটালিয়ন-৩’র সঙ্গে নিয়োজিত নারী শান্তিরক্ষীগণের কর্মতৎপরতা। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্রমোন্নতির ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেও সর্বক্ষেত্রে নারীদের অধিকতর অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। দক্ষিণ সুদানের যুদ্ধক্লান্ত ও বিপর্যস্ত সমাজে যেখানে নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশী নারী শান্তিরক্ষীগণ তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তাদের সমন্বিত কর্মদক্ষতা দক্ষিণ সুদানের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সার্বিক কৌশল নির্ধারণসহ ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুদের সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ধারণে একটি সেতুবন্ধন রচনায় সক্ষম হয়েছে। দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বৃহত্তর এবং টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের নারী কর্মকর্তারা অবদান রাখছেন।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু