শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৯:২০, ৯ জুলাই ২০২০

গ্রামই হবে আগামীর চালিকাশক্তি

গ্রামই হবে আগামীর চালিকাশক্তি

চলমান কভিড-১৯ মহামারী শেষে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে গ্রামীণ অর্থনীতিকে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ কৃষি ও শিল্প উৎপাদন সচল রাখতে হবে। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাও হবে একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তিই হলো গ্রামীণ অর্থনীতি। গ্রামের হাটবাজার, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলোকে ধীরে ধীরে সচল করতে হবে। কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের সরবরাহ চেইন ঠিক রাখতে গ্রামের হাটবাজার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে চালু করতে হবে। সচল রাখতে হবে পরিবহনব্যবস্থা। আর একটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো কৃষকের ন্যায্যমূল্যপ্রাপ্তি। কৃষক যদি তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য না পান তাহলে উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন; যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষিতে বাম্পার ফলন হলেও পণ্য পরিবহনে প্রতিবন্ধকতা আর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার কারণে সামনে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। জেলা-উপজেলার ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নিজেদের পুঁজি হারানোর শঙ্কায় উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। কভিড-১৯ মোকাবিলায় যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি পোষাতে গ্রামীণ পর্যায়ে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের জন্য সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার জরিপ অনুযায়ী, ইতোমধ্যে দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। সামনে নতুন করে অন্তত ২ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবে। বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে এমন তথ্য জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসি ও ব্র্যাক। এদিকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) গত ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেছে, কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ১৬০ কোটি মানুষ চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে; যা মোট কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর অর্ধেক। বাংলাদেশও রয়েছে উচ্চঝুঁকিতে। শহরের পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষও ভীষণ কষ্টের মধ্যে রয়েছে। কেননা সামগ্রিকভাবে কাজের সুযোগ কমে গেছে। কিন্তু কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে আবার যখন উৎপাদনসহ অন্যান্য কাজকর্ম পুরোদমে চালু হবে তখন গ্রামেই কাজের সুযোগ বাড়বে। তবে এ মুহূর্তে জীবন ও জীবিকার সঙ্গে লড়াই করে টিকতে না পেরে বিপুলসংখ্যক মানুষ যারা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে তাদের জন্যও গ্রামে কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের কৃষিসহ নানা কাজে সংযুক্ত করতে হবে। করোনাভাইরাস মহামারীর দরুন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। আর জীবন-জীবিকার কোনো হিসাবই মেলাতে পারছে না নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। এ পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে দেশে অন্তত সাড়ে ৬ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে; যা দেশে সামাজিক সংকট তৈরি করবে। এ সংকট শুধু শহরে নয়, গ্রামেও বিস্তৃতি ঘটাবে। তবে গ্রামে এর প্রভাব পড়বে অপেক্ষাকৃত কম। অতএব সামনের দিনে সম্ভাব্য সংকট মোকাবিলার জন্য এখনই ভাবতে হবে। যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ খাদ্য মজুদ রয়েছে তাতে অন্তত আগামী এক বছর কোনো সংকট হবে না। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ যারা দিন আনে দিন খায় তারা কাজ করতে না পারায় সংকটে পড়েছে। এদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সামাজিক সংকট তৈরি হবে; যা দেশের বিভিন্ন খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে তারা মনে করেন। এ ছাড়া ঈদুল আজহা সামনে রেখে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির অর্থনীতিটাকে যথাসম্ভব চাঙ্গা করতে হবে। কেননা গ্রামের মানুষের ঘরে ঘরে কোরবানির পশু রয়েছে। এসব পশু পুষতেও বিপুল অঙ্কের অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হয়েছে। অনেকেই আবার ব্যাংক কিংবা এনজিও ঋণের টাকা নিয়ে গরুর খামার করেছেন। এ কোরবানিকে ঘিরেই গ্রামীণ অর্থনীতি প্রতি বছর মৌসুমভিত্তিক চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এ বছর ঈদুল ফিতর ও বাংলা নববর্ষের কোনো অনুষ্ঠান বা কেনাকাটা না হওয়ায় পুরোটাই মারা পড়েছে। ফলে ঈদুল আজহায় যতটা পারা যায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ