শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ৯ আগস্ট ২০২০

গ্যাসক্ষেত্র কিনে নেয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুই নিয়েছিলেন

গ্যাসক্ষেত্র কিনে নেয়ার সাহসী সিদ্ধান্ত বঙ্গবন্ধুই নিয়েছিলেন

স্বাধীনতার মাত্র চার বছরেরও কম সময় সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার মাত্র ছয়দিন আগে বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েলের কাছ থেকে তিতাস, রশিদপুর, হবিগঞ্জ, বাখরাবাদ এবং কৈলাসটিলা গ্যাস ক্ষেত্র কিনে নেয় বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় মালিকানা। ১৯৭৫ থেকে ২০২০। সময়টি লম্বা ৪৫ বছরের। ৭৫-এর ৯ আগস্ট থেকে ২০২০-এর ৯ আগস্ট, ১৬ হাজার ৪২৫ দিনের ফারাক। এতগুলো বছর এতগুলো দিন পেরিয়ে গেলেও দেশের জ্বালানিখাতে এমন সাহসী সিদ্ধান্ত আর একটিও নেয়া হয়নি। যুদ্ধবিদ্ধস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতির সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু যে সাহস দেখিয়েছিলেন এখনও পর্যন্ত তা আর কেউ দেখাতে পারেননি। কিন্তু বছরের পর বছর এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। একে একে দেশের সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্র বিদেশীদের হাতেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরের ২৩ জুন জাতীয় সংসদে ওই বছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়। সেই বাজেটের আকার ছিল এক হাজার ৫৪৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ওই সময়ে চার দশমিক পাঁচ মিলিয়ন পাউন্ডে গ্যাসক্ষেত্রগুলো কেনার সাহস বঙ্গবন্ধু ছাড়া পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা কেউ দেখাতে পারতেন কি না সন্দেহ রয়েছে। চলতি বছর যে বাজেট ঘোষণা হয়েছে তার আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বছর গড়িয়েছে বাজেটের আকার বেড়েছে। কিন্তু সাহস কী বেড়েছে। সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পেরিয়ে গেছে ৮ বছর। কিন্তু সমুদ্রের ব্লকগুলোতে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে একটি কূপ খনন করা সম্ভব হয়নি। পেট্রোবাংলার বক্তব্য দেশের সাগরে কাজ করার দক্ষতা নেই, কাজেই বহুজাতিক কোম্পানি ছাড়া ভরসা কী? যদিও এই অযুহাত নিয়ে আপত্তি রয়েছে। সাধারণত কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধ লোক যেমন পাওয়া যায়। তেমনি প্রযুক্তিও ভাড়া পাওয়া যায়। যেসব বহুজাতিক কোম্পানি এসব কাজ করে তারাও লোক এবং প্রযুক্তি ভাড়াই করে। তাহলে আমরা কেন পারছি না, সাহস নেই বলেই কী? নাকি নিজের স্বার্থ উদ্ধারে দেশের স্বার্থের জলাঞ্জলি দেয়া হয়েছে।

এমন প্রশ্নে পেট্রোবাংলার সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক হোসেন মনসুর বলেন, বঙ্গবন্ধু যা করেছিলেন পরের সরকারগুলো ঠিক তার উল্টো করেছে। সম্ভাবনাময় সবক্ষেত্রই বিদেশীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, জরুরী প্রয়োজনে রাশিয়ান কোম্পানি গ্যাসপ্রমকে ১০টা কূপ খনন করার কাজ দেয়া হয়েছিল। তাদের দাম অত্যধিক বেশি হওয়াতে পরে আর তাদের কাজ দেয়া হবে না বলে ঠিক করা হয়। কিন্তু সেই কথা কি আর কেউ রেখেছে। তিনি বলেন, আমাদের পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারাই গ্যাসপ্রমের সঙ্গে মিটিং করে অতিরিক্ত অর্থ দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, গ্যাসপ্রমও পেট্রোবাংলার মতোই তারাও তৃতীয়পক্ষকে দিয়ে কাজ করায়। তাহলে তাদের কেন কাজ দিতে হবে। তিনি বলেন, বাপেক্সকে ইচ্ছাকৃত বসিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে তারা কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বিদেশীদের কাজ দেয়ার জন্যই এইসব ব্যবস্থা বলে মনে করেন তিনি।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট এক পরিপত্রে ৯ আগস্টকে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকে প্রতিবছর এইদিন সরকার জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এবারের আয়োজন বিশেষ গুরুত্ববহন করছে। যদিও করোনার কারণে আনুষ্ঠানিকতাই ছাড়াই হবে অনুষ্ঠান। এ বছর জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, সাশ্রয়ী জ্বালানির প্রাধিকার।’ যদিও এই স্লোগানের ঠিক উল্টো পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। দেশের মধ্যে বিদেশী কোম্পানির ওপর নির্ভরতা ছাড়িয়ে এখন আমদানি নির্ভরতায় ঝুঁকছে। তেল গ্যাস অনুসন্ধানে এই অচলাবস্থা বিরাজ করলে আগামী দশ বছরের মধ্যে শতভাগ জ্বালানিই আমদানি করতে হবে। যাতে সাশ্রয়ী জ্বালানি পাওয়ার সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলো নিজেদের ক্ষেত্র গত ৬ আগস্ট ৮১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস তুলছে। আর বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তুলছে এক হাজার ২৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট। বঙ্গবন্ধু সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের পরিমাণ বাড়িয়েছিলেন। উল্টো যখন অসামান্য এই অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধুকে বছর বছর স্মরণ করা হচ্ছে তখন দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন কমছে। তাহলে এই দিবস পালন কি শুধুই আনুষ্ঠানিকতা এ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

এখন দেশে প্রতিদিন গড়ে ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএএনজি) আমদানি করা হচ্ছে। কিন্তু অবকাঠামো রয়েছে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি করার। এছাড়া দেশে আরও দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট আমদানি সক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া দেশে কয়লা চালিত যেসব বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে তাও চলবে আমদানি করা জ্বালানিতে। দেশের উত্তরবঙ্গে কয়লাখনি থাকলেও বড়পুকুরিয়া ছাড়া আর কোন খনির কয়লা এখনও উত্তোলন করা হয়নি। এসব খনি উন্নয়নের কোন পরিকল্পনাও নেই। ফলে বঙ্গবন্ধু যে আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা দিয়েছিল পরবর্তী সরকারগুলো তা অনুসরণ করেনি। এতে করে জ্বালানিখাত আমদানিনির্ভর হয়ে উঠেছে। এতে অনিশ্চয়তা যেমন সৃষ্টি হয়েছে তেমনি মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হচ্ছে।

ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, তখন দেশের বড় বড় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছিল বহুজাতিক কোম্পানি শেল ওয়েল। বঙ্গবন্ধু শেল ওয়েলের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে গ্যাস ক্ষেত্রগুলো কিনে নিয়েছিলেন। যেখান থেকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ গ্যাসের যোগান পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে আমাদের বঙ্গবন্ধু আত্মনির্ভরশীল হওয়া শিখিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো ঠিক এর উল্টোপথে চলেছে। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার বদলে বিদেশনির্ভর হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালে দেশের ৯০ ভাগ জ্বালানিই আমদানি করতে হবে। আমরা সবাই বিষয়টি বুঝতে পারছি। কিন্তু নিজস্ব জ¦লানি অনুসন্ধানের কোন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাকে কাজে লাগালেই দেশ জ্বালানিখাতে আত্মনির্ভরশীল হতো।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ

শিরোনাম

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ভাতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপনদেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীরঈদে বেড়েছে রেমিট্যান্স, ফের ২০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রিজার্ভ১৪ কিলোমিটার আলপনা বিশ্বরেকর্ডের আশায়তাপপ্রবাহ বাড়বে, পহেলা বৈশাখে তাপমাত্রা উঠতে পারে ৪০ ডিগ্রিতেনেইমারের বাবার দেনা পরিশোধ করলেন আলভেজ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ কী? কীভাবে করবেন?বান্দরবানে পর্যটক ভ্রমণে দেয়া নির্দেশনা চারটি স্থগিতআয়ারল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রীকে শেখ হাসিনার অভিনন্দনজুমার দিনে যেসব কাজ ভুলেও করতে নেইগোবিন্দগঞ্জে কাজী রাশিদা শিশু পার্কের উদ্বোধনইউরোপের চার দেশে বাংলাদেশি শ্রমিক নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু