বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ || ১৩ চৈত্র ১৪৩০

প্রকাশিত: ১৮:৩৭, ৯ জুলাই ২০২০

আউশ চাষে বিপ্লব

আউশ চাষে বিপ্লব

বোরো ধান সংগ্রহে হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্যে আউশ কেনার স্বপ্ন বুনছে সরকার। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এবারই প্রথম সরকারিভাবে আউশ ধান কেনাবেচা হবে। বিরূপ পরিস্থিতির মধ্যেও এই সোনালি ফসল ফলনে কৃষকরা বিপ্লব ঘটানোয় নতুন আশায় নড়েচড়ে বসছে সরকার। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আউশ ধান কেনার পরিকল্পনার তথ্য জানা গেছে।

সংশ্নিষ্টরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে চাষাবাদ ব্যাহত হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব। এখনও উপকূলের অনেক জমি নোনা পানিতে সয়লাব। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে আগাম বন্যার প্রকোপ। এতসব চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির মধ্যেও গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় দুই লাখ হেক্টর বেশি আবাদ হয়েছে। ফলে প্রায় সাড়ে ৩৬ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আউশের এই বিপ্লবকে আশাজাগানিয়া বলছেন সংশ্নিষ্টরা।

খাদ্য সচিব ড. নাজমানারা খানুম সমকালকে বলেন, আউশ চাষে কৃষকদের সাফল্য দেশকে খাদ্যে সমৃদ্ধ করবে। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বব্যাপী যে খাদ্য সংকটের সতর্কতা রয়েছে, সেদিক থেকে দেশে আউশের বাম্পার ফলন খুবই ইতিবাচক বিষয়। এ ছাড়া বোরো ধান সংগ্রহে হতাশাজনক পরিস্থিতিতে এবারই প্রথম আউশ ধান কেনার পরিকল্পনা করছে সরকার। তিনি জানান, এবার সারাদেশে বোরো ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল আট লাখ টন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত দুই মাসের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬৬ হাজার ৫৬০ টন। যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। চাল ও গম সংগ্রহে এগিয়ে গেলেও ধানের দিক থেকে সরকার অনেক পেছনে। নির্দিষ্ট করে গত বছরের সঙ্গেও যদি তুলনা করা হয়, তাহলে এই সময়ের মধ্যে ধান সংগ্রহে অন্তত চার লাখ টন পিছিয়ে রয়েছে সরকার। ফলে এবার ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

এ অবস্থায় আউশের বাম্পার ফলনে আশার কথা জানিয়ে ড. নাজমানারা বলছেন, এর আগে কখনও আউশ কেনার ঘটনা নেই। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এবার সরকার আউশ কেনার পরিকল্পনা করছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে আউশ নিয়ে সংশয় কেটে গেছে। অনেক এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত এতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না বলেও মনে করছেন তিনি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্য, ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৩ লাখ ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আউশের চাষ হচ্ছে। গত অর্থবছরে যা ছিল ১১ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর। এ জন্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টন। গত অর্থবছরের চেয়ে এবার আউশ উৎপাদন কয়েক লাখ টন বাড়বে বলেও আশা সংশ্নিষ্টদের।

এদিকে, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা-এফএও বলছে, করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্যশস্যের নিরাপত্তায় এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে দুই কোটি টন বোরো চাল কৃষকের ঘরে উঠে গেছে। মোট আবাদের ৯৫ শতাংশের বেশি ধান কাটা হয়েছে। এ ছাড়াও গত আমন মৌসুমেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আমন উৎপাদন হয়েছে। সব মিলিয়ে চালের উৎপাদন পরিস্থিতি ভালো হওয়ার কারণে দেশে দানাদার খাদ্যশস্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।

বাংলাদেশের খাদ্য পরিস্থিতি নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, দেশে চলতি অর্থবছরে চালের চাহিদা থাকবে প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ টন এবং গমের চাহিদা থাকবে ৫৫ লাখ টন। সব মিলিয়ে দানাদার খাদ্যশস্যের চাহিদা থাকবে তিন কোটি ৭৫ লাখ টন। এ চাহিদার বিপরীতে চলতি অর্থবছরে উৎপাদন দাঁড়াবে তিন কোটি ৯৯ লাখ টন। ফলে প্রায় ২৫ লাখ টন শস্য উদ্বৃত্ত থাকবে। আগামী ছয় মাস ভোগের জন্য খাদ্যশস্যের যতটুকু প্রয়োজন সেটিও পর্যাপ্ত রয়েছে।

এফএওর এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে অনেকটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সমকালকে বলেন, এটি খুবই ভালো দিক। করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কোনো কোনো অঞ্চলে যখন দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশে দানাদার শস্য উদ্বৃত্ত থাকাটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। এমনিতেই বর্তমানে দেশে কোনো খাদ্য সংকট নেই। এর মধ্যে ধান-চাল আমদানিরও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ফলে করোনা-উত্তর পরিস্থিতিতে দেশ খাদ্যের দিক থেকে কোনো সংকটে পড়বে না।

দৈনিক গাইবান্ধা

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

সর্বশেষ